বলিউডে আবারও ফিরছে শক্তিশালী সামাজিক বার্তাসমৃদ্ধ গল্প। পরিচালক সুপর্ণ এস. ভার্মা এবার নিয়ে এসেছেন এক নারীর ন্যায়বিচারের লড়াই নিয়ে নির্মিত নতুন ছবি ‘হক’। ছবিটির অফিসিয়াল ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে ইয়ামি গৌতম ও ইমরান হাশমির তীব্র আদালত-বিষয়ক দ্বন্দ্ব।
ছবিতে ইয়ামি গৌতম অভিনয় করেছেন শাজিয়া বানো চরিত্রে, যিনি তার স্বামী আব্বাস (ইমরান হাশমি)-এর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ন্যায়ের দাবিতে উচ্চ আদালতে লড়াই শুরু করেন। গল্পের সূচনা হয় একটি প্রশ্ন দিয়ে—“কেন সব শাস্তি ও আইন শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য, আর পুরুষরা তার বাইরে?” এই এক প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় সমাজ, ধর্ম ও ন্যায়বোধের সংঘর্ষ।
শাজিয়ার স্বামী আব্বাস ত্রৈতালাকের মাধ্যমে হঠাৎ বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে মাসিক ভাতা বন্ধ করে দেন। অন্যায়ের প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হন শাজিয়া, আর সেখানেই শুরু হয় এক নারীর নিজের অস্তিত্ব ও অধিকারের লড়াই।
ট্রেলারে দেখা যায়, একসময়ের ভালোবাসার সম্পর্ক আদালতের কাঠগড়ায় রূপ নেয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আব্বাস বলেন, “এই মামলা এতদূর যাওয়া উচিত ছিল না। তুমি ভেবেছিলে আমি ভয় পেয়েছি?”
জবাবে শাজিয়া দৃঢ়ভাবে বলেন, “এটা তোমার কথায় থাকা নিয়ে।”
এই সংলাপেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাদের সম্পর্কের জটিলতা—একদিকে ভালোবাসা, অন্যদিকে বিশ্বাসঘাতকতা ও সামাজিক অসমতা। অতীতের মধুর মুহূর্তগুলোর ফ্ল্যাশব্যাকের সঙ্গে বর্তমানের তিক্ত বাস্তবতা দর্শককে ভাবিয়ে তুলবে।
শাজিয়া বলেন, “আমি শুধু মুসলিম মহিলা নই, আমি হিন্দুস্তানের একজন মুসলিম মহিলা। তাই আইন আমাকে হিন্দুস্তানের অন্যান্য মহিলাদের মতো সমানভাবে দেখবে।” ট্রেলারে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে মুসলিম পারসোনাল আইন বনাম সেক্যুলার আইন-এর দ্বন্দ্ব। ছবিটি শুধু এক নারীর গল্প নয়; এটি পুরো সমাজের সামনে একটি মৌলিক প্রশ্ন তোলে—ন্যায় কি ধর্মের ওপর
পরিচালক সুপর্ণ এস. ভার্মা আদালতঘরকে ব্যবহার করেছেন সামাজিক বিতর্কের প্রতীক হিসেবে, যেখানে প্রতিটি সংলাপ একেকটি যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির মতো আঘাত হানে। ইয়ামি গৌতমের চরিত্রে অভিনয় নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম পরিণত কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সংলাপ প্রদানে তার দৃঢ়তা ও আবেগ একসঙ্গে দর্শকের হৃদয়ে অনুরণন তোলে। ইমরান হাশমি এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে হাজির—একজন আত্মবিশ্বাসী, যুক্তিবাদী কিন্তু দ্বন্দ্বে ভরা মানুষ হিসেবে।
সহঅভিনেতাদের মধ্যে আছেন ভার্তিকা সিং, দানিশ হুসেন, শীবা চাড্ডা এবং অসীম হট্টানগড়ি। প্রত্যেকেই নিজেদের চরিত্রে গভীরতা যোগ করেছেন। গল্প, স্ক্রিনপ্লে ও সংলাপ রচনা করেছেন রেশু নাথ, যিনি সামাজিক ও আবেগঘন বিষয়ে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। প্রাথম মেহতার সিনেমাটোগ্রাফি আদালতের দৃশ্যগুলোতে গভীর আলোকছায়ার ব্যবহার করে গম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। নিনাদ খানোলকারের সম্পাদনা ও ভিশাল মিশ্রার সঙ্গীত মিলে ছবিটিকে আরও প্রভাবশালী করে তুলেছে।
ট্রেলারের শেষ মুহূর্তে উচ্চারণ করা হয়, “যখন নীরবতা ভাঙা হলো, ইতিহাস চিরতরে বদলে গেল।” এই সংলাপই ছবির সারকথা—যে নীরবতা একসময় নারীদের শৃঙ্খলিত করেছিল, আজ সেই নীরবতা ভাঙছে নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে।
‘হক’ শুধু একটি আদালতঘরভিত্তিক চলচ্চিত্র নয়, এটি নারীর অধিকার, ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং রাষ্ট্রের আইনের মধ্যকার সূক্ষ্ম সম্পর্ককে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে। আগামী ৭ নভেম্বর ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে, আর ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই বলিউডপ্রেমীদের মধ্যে আগ্রহ তুঙ্গে। অনেকেই মনে করছেন, এটি হতে পারে বছরের অন্যতম আলোচিত সামাজিক ও আইনি নাট্যচিত্র।
Leave a comment