আজ ২০ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি।
জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৪১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকার আগাসাদেক রোডে জন্মগ্রহণ করেন মতিউর রহমান। পড়াশোনা শুরু করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরে পাকিস্তানের সারগোদা এয়ার ফোর্স পাবলিক স্কুলে। ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৬৩ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভৈরবে এসে তিনি মুক্তিকামী যুবকদের সংগঠিত করেন। একই বছরের ২০ আগস্ট পাকিস্তানের করাচির মাসরুর বিমানঘাঁটি থেকে এক প্রশিক্ষণার্থী পাইলটের কাছ থেকে টি-৩৩ বিমান ছিনিয়ে নিয়ে মুক্তাঞ্চলে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থল থেকে অর্ধ মাইল দূরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
মরদেহ প্রত্যাবর্তন ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা
শহীদ হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার তাকে করাচির মাসরুর বেসের একটি কবরস্থানে দাফন করে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর, ২০০৬ সালের ২৪ জুন তার দেহাবশেষ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং পরদিন মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনঃদাফন করা হয়।
স্মৃতিচিহ্ন ও গ্রন্থাগার
মতিউর রহমানের শৈশব কেটেছে নরসিংদীর রায়পুরার রামনগর গ্রামে, যা বর্তমানে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর’ নামে পরিচিত। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে ২০০৮ সালে রামনগর হাইস্কুলের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর’। তবে ১৬ বছর পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।
গ্রন্থাগারে বর্তমানে চার হাজারের বেশি বই থাকলেও যাদুঘরে নেই মতিউর রহমানের কোনো ব্যবহারিক স্মৃতি। পাঠকসংখ্যা সীমিত, ভবনের ভেতরে বৃষ্টির পানি জমে দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ইলেকট্রিক বাতিও নষ্ট হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন লাইব্রেরিয়ান বিউটি আক্তার।
স্থানীয়রা মনে করছেন, যথাযথ উদ্যোগ ও সরকারি মনোযোগ পেলে এই গ্রন্থাগার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানকে সংরক্ষণে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধে মতিউরের অসম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ জাতীয় খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে।
Leave a comment