‘শিক্ষকতা পেশা : মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস।
দিবসটির সূচনা ও গুরুত্ব
১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সম্মেলনে ৫ অক্টোবর দিনটিকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৪ সাল থেকে ১০০টিরও বেশি দেশে এই দিবসটি পালন শুরু হয়। শিক্ষক সমাজের অবদানের স্বীকৃতি ও তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই দিবসটির যাত্রা শুরু হয়।
শিক্ষক দিবসের উদ্দেশ্য কেবল শিক্ষকদের সম্মান জানানো নয়—বরং সমাজে শিক্ষা ও শিক্ষকের ভূমিকা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়া। শিক্ষক ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়, কারণ একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীর চিন্তা, চরিত্র ও ভবিষ্যৎ গঠনের মূল কারিগর।
শিক্ষক—জাতি গঠনের কারিগর
শিক্ষকরা সমাজের আলোকবর্তিকা। তারা শুধু পাঠদান করেন না, বরং নতুন প্রজন্মকে নৈতিকতা, মানবিকতা ও জ্ঞানের আলোয় গড়ে তোলেন। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর জীবনে এমন ছাপ রেখে যান, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল্যবোধ ও চিন্তার ভিত্তি স্থাপন করে।
জাতি গঠনে শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম। তারা সমাজে বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তুলতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন।
দিবসটির তাৎপর্য ও বার্তা
বিশ্ব শিক্ষক দিবস শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারের বার্তা বহন করে। শিক্ষকতা পেশাকে আরও আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক করতে প্রয়োজন যথাযথ সুযোগ-সুবিধা, উন্নত বেতন কাঠামো এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ। জাতীয় পর্যায়ে এই দিবস শিক্ষকদের অধিকার ও মূল্যায়নের দাবি জোরদার করে। তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী করে তোলাও দিবসটির অন্যতম উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে নানা কর্মসূচি
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সংগঠন ও শিক্ষার্থী মহলে নানা আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে র্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোববার সকালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান’। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাধ্যমিক, মাদরাসা, কারিগরি ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মনোনীত ১২ জন শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হবে।
এর আগে প্রাথমিকভাবে ৩৬ জন শিক্ষককে বাছাই করা হয়েছিল, যাদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে ১২ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী উদযাপন
বিশ্বজুড়ে শিক্ষক দিবসকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠান, কর্মশালা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) প্রতিবারের মতো এবারও শিক্ষকদের মর্যাদা, অধিকার ও পেশাগত উন্নয়ন বিষয়ে বৈশ্বিক বার্তা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রতিপাদ্য “শিক্ষকতা পেশা : মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি” বিশ্বজুড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সরকারগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সংহতির গুরুত্বকে তুলে ধরে।
শিক্ষকদের প্রতি সম্মান—সমাজের অগ্রগতির শর্ত
শিক্ষক দিবসের মাধ্যমে সমাজে শিক্ষকদের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। কারণ জাতি তখনই এগিয়ে যেতে পারে, যখন শিক্ষককে সম্মান করা হয় এবং শিক্ষাকে মূল্য দেওয়া হয়।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষকতার মানোন্নয়ন ও সম্মান বৃদ্ধির মধ্য দিয়েই টেকসই উন্নয়ন (SDG) অর্জন সম্ভব। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার এই দিনটি তাই কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, বরং জাতি হিসেবে আত্মসমালোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
শেষকথা
শিক্ষকরা আমাদের জীবনের প্রথম অনুপ্রেরণার উৎস। তারা শুধু জ্ঞান দেন না—তারা আলোকিত মানুষ হতে শেখান।
আজকের এই দিনে শিক্ষক সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তাদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোই হওয়া উচিত দিবসটির প্রকৃত তাৎপর্য।
Leave a comment