২২ মে: আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। জাতিসংঘের উদ্যোগে পালিত এই বিশেষ দিনটির মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং এই বিষয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করা।
বিশ্বের পরিবেশপ্রেমী ও গবেষক মহলের কাছে এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ জীববৈচিত্র্য শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য নয়, বরং এটি আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এবং সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমে ২৯ ডিসেম্বর দিবসটি পালিত হলেও, ২০০০ সাল থেকে ২২ মে-তে স্থানান্তর করা হয়। কারণ এই তারিখেই ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক আর্থ সামিটে ‘কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি’ গৃহীত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। জীববৈচিত্র্য আজ শুধু বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের সীমায় আবদ্ধ নয়; বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন, শহুরে উন্নয়ন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসসহ বহু খাতে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বিশ্বে দ্রুতগতির নগরায়ন, বন উজাড়, দূষণ, ভূমির অবক্ষয়, অতিরিক্ত কৃষি নির্ভরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্বজুড়ে প্রাণবৈচিত্র্য। প্রতিবছর হাজার হাজার প্রজাতি বিলুপ্তির পথে, যেগুলোর বেশিরভাগই আমাদের পরিচিতির বাইরে থেকেই চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি প্রয়োজনীয় বার্তা বহন করে—আমরা প্রকৃতির অংশ এবং প্রকৃতির সুরক্ষা মানেই মানবজাতির টিকে থাকার নিশ্চয়তা। এই দিনে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান কর্মসূচি পালন করে থাকে যেমন—বৃক্ষরোপণ, সচেতনতামূলক আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম।
এই বছরের প্রতিপাদ্য “Be part of the Plan” বা “পরিকল্পনার অংশ হোন”—এই আহ্বান জানায় প্রতিটি মানুষ, প্রতিষ্ঠান ও সরকারকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কৌশল ও নীতিনির্ধারণে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে। প্রকৃতিকে রক্ষা করার এই বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় একযোগে অংশগ্রহণই পারে পৃথিবীকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে তুলতে।
আজকের এই দিনে, যখন আমরা প্রকৃতির অপরিমেয় উপকারিতা ও অবদানের কথা স্মরণ করি, তখন আমাদেরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন—নিজ নিজ অবস্থান থেকে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য। কারণ, প্রকৃতি বাঁচলে, তবেই মানুষ বাঁচবে।
Leave a comment