আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল এবং উৎসবমুখর পরিবেশেই হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “জাতি এই ঐতিহাসিক নির্বাচন নিয়ে গর্ব করবে।” নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার বড় অর্জন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি)–২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, কোর্সের অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস বলেন, বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ, দক্ষতা অর্জন ও নেতৃত্ব বিকাশের মধ্য দিয়ে কোর্স সম্পন্নকারী কর্মকর্তারা দেশের উন্নয়ন ও অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তিনি উল্লেখ করেন, “ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তা, কৌশলগত নীতি প্রণয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিস্তৃত জ্ঞান অর্জনের এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম।”
প্রধান উপদেষ্টা দেশের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, দুর্যোগ, সংকট বা জাতীয় নিরাপত্তা—সবক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী আস্থা, দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে আসছে। জনগণের আস্থা অর্জনই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক সংকট বা জাতীয় নিরাপত্তা—যে ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হোক, সশস্ত্র বাহিনী সবসময় অক্সিজেনের মতো দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের ত্যাগ ও দায়িত্ববোধ আমাদের গর্বিত করে।”
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট দ্রুত পরিবর্তন হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত পরিকল্পনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতায় ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও সরকারের সব অঙ্গ প্রক্রিয়াটিকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে কাজ করছে। তার ভাষায়,“জাতীয় নির্বাচন একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। জনগণ উৎসবমুখরভাবে ভোট দিতে পারবে—এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।”
বক্তৃতার শেষাংশে প্রধান উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। তার আরোগ্য কামনায় আপনাদের সবার দোয়া চাই।” সমাপনী অনুষ্ঠানটি কোর্স অংশগ্রহণকারীদের দীর্ঘ এক বছরের কঠোর পরিশ্রম, গবেষণা ও নেতৃত্বগুণ বিকাশের স্বীকৃতি হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আগামী নির্বাচন, জাতীয় নিরাপত্তা ও নেতৃত্ব বিকাশ—সবগুলো বিষয়ই সমান গুরুত্ব পায়।
Leave a comment