অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় অবস্থানে থাকবে, জনগণের মনে থাকা সন্দেহও ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানকে প্রশ্ন করা হয়— কয়েক মাস আগে আপনি বলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ আছে, এখনো কি সেই সন্দেহ রয়ে গেছে?
জবাবে তিনি বলেন, “আমি যখন এই কথাটি বলেছিলাম, তখনো পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের কোনো নির্দিষ্ট টাইমফ্রেম বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। সে কারণেই তখন কেবল আমার নয়, অনেকের মনেই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “পরে আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন এবং তার সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। এরপর থেকেই স্বাভাবিকভাবে সেই সন্দেহ অনেকের মন থেকে দূর হতে শুরু করেছে।” তারেক রহমান মনে করেন, সরকার যদি তাদের ঘোষিত কর্মসূচিতে অবিচল থাকে এবং কথার সঙ্গে কাজের সামঞ্জস্য রাখে, তাহলে জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন—এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, “বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। আমরা শুরু থেকেই বলেছি, আমরা চাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। সফলতা মানে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা এবং একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা।”
তিনি বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সংবিধানসম্মত সংস্কার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের পারফরম্যান্স সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ক্ষণস্থায়ী প্রশাসনিক কাঠামো। একটি বিশাল দেশ, প্রায় ২০ কোটি মানুষের বাংলাদেশ পরিচালনা করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেটসহ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন।”
তবে তিনি স্বীকার করে বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন বিষয়ে চেষ্টা করছে। “সব ক্ষেত্রে সবাই সফল হতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে তারা যতটা পেরেছেন, চেষ্টা করেছেন
সাক্ষাৎকারে এক এগারোর (২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার) সময়ের মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এক এগারোর সরকার ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ উদ্দেশ্যে গঠিত একটি সরকার। তারা দেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ভিত্তি ভেঙে দিতে চেয়েছিল, দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চেয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “পরে আমরা দেখেছি সেই একই প্রবণতা ভিন্ন রূপে ফিরে এসেছে—‘ইন দ্য নেম অব ডেমোক্রেসির ’ (গণতন্ত্রের ) নামে। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতিমালা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেন, “বিএনপির মূলনীতি একটাই—সবার আগে বাংলাদেশ। আমার জনগণ, আমার দেশ, আমার সার্বভৌমত্ব—এই স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখেই আমরা কূটনীতি পরিচালনা করব।”
তিনি বলেন,“আমি বাংলাদেশি, তাই আমার কাছে বাংলাদেশের স্বার্থই সবচেয়ে বড়। কে কী বলল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবার আগে বাংলাদেশ—এটাই আমাদের নীতি।” সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের বক্তব্যে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Leave a comment