ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পর এবার কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনেও বিক্ষোভ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এবং সম্প্রতি ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবক নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কলকাতায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে কূটনৈতিক মিশনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু ও সংবাদ সংস্থা পিটিআই–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কয়েকশ বিক্ষোভকারী কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে জড়ো হন। সেখানে আগে থেকেই মোতায়েন থাকা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা চালান তারা। বিক্ষোভকারীদের হাতে গেরুয়া রঙের পতাকা দেখা যায় এবং তারা উত্তেজনাকর স্লোগান দিতে থাকেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন পুলিশ সদস্যদের বেশ বেগ পেতে হয়। নিরাপত্তা জোরদার করতে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় এবং উপ-হাইকমিশনের আশপাশের এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও কিছু সময় ধরে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করে।
তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের নাম নিশ্চিত করা না গেলেও স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কলকাতায় বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। মঙ্গলবারের ঘটনার সঙ্গে সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে একই দিন সকালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এনডিটিভি–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ এবং ‘ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামের এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার’ অভিযোগ তুলে বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারাও নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালান।
নয়াদিল্লিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনীকে আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করতে হয়। হাইকমিশন ভবনের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয় এবং কূটনৈতিক এলাকায় যান চলাচলেও সাময়িক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগেও ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রাতে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গেটের সামনে একদল বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায়। ওই সময়ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হাইকমিশনের চারপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব বিক্ষোভ ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। এ ধরনের বিক্ষোভ ও ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলেও মত দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a comment