ভারতের অযোধ্যায় ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের পুনর্নির্মাণকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টিকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করছে বিজেপি, অন্যদিকে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এ কর্মসূচির আয়োজন করেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রস্তাবিত মসজিদের স্থান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নির্মিত দুইস্তর বিশিষ্ট মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রায় ৪০০ মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দেন কবীর। তিনি সৌদি আরব থেকে আগত দুই আলেমকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে কবীর বলেন, “উপাসনালয় নির্মাণ সাংবিধানিক অধিকার। ১৯৯২ সালের ধ্বংসের ক্ষত মুছতেই বাবরি মসজিদ আবার গড়ে তোলা হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর রাজনীতি হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন—“দেশে ৪০ কোটি মুসলমান, রাজ্যে ৪ কোটি; তারা কি একটি মসজিদও নির্মাণ করতে পারবে না?”
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, “ব্যক্তিগত জমিতে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের অধিকার আছে, তবে ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অনুচিত।”
বিজেপি এই কর্মসূচিকে সরাসরি রাজনৈতিক বলে অভিযুক্ত করেছে। দলটির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য বলেন, “এটি ধর্মীয় প্রকল্প নয়, নির্বাচনের আগে আবেগ উসকে ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী করার কৌশল।” বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও অভিযোগ করেন, “২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে তৃণমূলই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।”
এমতাবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ পোস্ট করে রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, “সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালানোর চেষ্টা যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলার মাটি কখনও বিভেদের কাছে মাথা নত করেনি।” রেজিনগরের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তাপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
Leave a comment