যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ১৯টি দেশের নাগরিকদের জন্য গ্রিনকার্ড, স্থায়ী বসবাস এবং নাগরিকত্বের আবেদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কঠোর সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। এর ফলে উল্লিখিত দেশগুলোর কেউই যুক্তরাষ্ট্রে আর অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
ট্রাম্প বলেন,“জাতীয় নিরাপত্তা, মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষা এবং সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ঝুঁকি মোকাবিলার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এর আগে গত জুনে এই দেশগুলোর বিরুদ্ধে আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এবার তা পূর্ণ নিষেধাজ্ঞায় রূপ নিল।
মার্কিন প্রশাসন জানায়, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি চালান এক আফগান শরণার্থী। ওই ঘটনায় একজন সেনা নিহত হন এবং আরেকজন গুরুতর আহত হন। হামলার পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশগুলো থেকে শরণার্থী ও অভিবাসী গ্রহণ সম্পূর্ণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।
ট্রাম্প বলেন,“আমরা ‘তৃতীয় বিশ্বের বিপজ্জনক অঞ্চল’ থেকে আসা কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি মেনে নেব না। আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তাই প্রথম।” যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশগুলো হলো:আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা।
এ দেশগুলোর কোনো নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ড, অভিবাসন ভিসা, শরণার্থী মর্যাদা বা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না। হামলার ঘটনার পর হোয়াইট হাউসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। বিশেষ করে সোমালিয়ার শরণার্থীদের উদ্দেশে তিনি অত্যন্ত কঠোর ভাষা ব্যবহার করেন। প্রেসিডেন্ট বলেন,“সোমালিয়া থেকে আসা শরণার্থীরা মার্কিন সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা মার্কিন নিরাপত্তার জন্য ‘আবর্জনা’।”
এমনকি ট্রাম্প সোমালি বংশোদ্ভূত মার্কিন কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর সম্পর্কেও অবমাননাকর মন্তব্য করেন, যা রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী এবং জাতিগত বৈষম্যকে উসকে দিতে পারে।
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে— লাখো প্রবাসী পরিবারের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্মিলন অনিশ্চিত হবে, শরণার্থী পুনর্বাসন কার্যক্রম কঠোরভাবে সীমিত হবে ,সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি গত এক দশকে কখনও এত বড় পরিসরে স্থগিত করা হয়নি। ফলে এ সিদ্ধান্তকে দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
Leave a comment