ভারতে অবস্থান করে চার বছর ধরে গোপনে পর্নোগ্রাফি ভিডিও তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি যুবক রাসেল সিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। হুগলি জেলার ডানকুনি পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃগালা মল্লিকপাড়া এলাকার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে পরিচালিত হতো এই অবৈধ কর্মকাণ্ড। গত শনিবার (২২ নভেম্বর) পুলিশের বিশেষ অভিযানে রাসেলকে আটক করা হয় এবং তার ‘স্ত্রী পরিচয়ধারী’ এক বাংলাদেশি তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর ধরে ডানকুনির ওই ফ্ল্যাট থেকে নিয়মিত নীল ছবি তৈরি করতেন রাসেল সিকদার। ভিডিওগুলো বিভিন্ন পর্ন সাইট ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করে তুলতেন বিপুল অর্থ। স্থানীয়ভাবে তারা দম্পতি হিসেবে পরিচিয় দিলেও পুলিশি তদন্তে জানা যায়, দুজনই বাংলাদেশি নাগরিক এবং ভারতে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন।
ফ্ল্যাটটিকে স্টুডিওর মতো ব্যবহার করা হতো। এ সময় বিভিন্ন সরঞ্জাম, আলো, ক্যামেরা ও ভিডিওগ্রাফি সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ, যেগুলো ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছিল ভিডিও কনটেন্ট।
পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে যখন রাসেলের সঙ্গে থাকা তরুণী গোপনে পুলিশের কাছে সাহায্য চান। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকেই কাজের প্রলোভন দেখিয়ে রাসেল তাকে ভারতে নিয়ে আসেন। এখানে এনে তাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি ফ্ল্যাটে রাখলেও প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন করতেন।
তরুণীর অভিযোগ অনুযায়ী, তাকে জোরপূর্বক পর্ন ভিডিওতে অভিনয় করতে বাধ্য করা হতো। আপত্তি জানালে হুমকি দেওয়া হতো এবং মারধর করা হতো। রাসেলের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে রাসেল সিকদার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তরুণী বাংলাদেশের দূতাবাস, পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন এবং স্থানীয় থানায় সাহায্য চান। তার সরবরাহ করা নির্দিষ্ট ঠিকানা ও তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ শনিবার অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেপ্তার এবং তরুণীকে উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ নিশ্চিত করেছে, রাসেল এবং ওই তরুণী দুজনই বাংলাদেশি নাগরিক এবং ভারতে বেআইনিভাবে বসবাস করছিলেন। রবিবার হুগলির শ্রীরামপুর আদালতে রাসেলকে পেশ করা হলে বিচারক তাকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলার তদন্ত চলছে, আর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে উদ্ধারকৃত ডিভাইসগুলো পরীক্ষা করা হবে।
উদ্ধার হওয়া তরুণীকে আপাতত একটি সেফ হোমে রাখা হয়েছে, যেখানে তার নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় মনোসামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর হুগলির ডানকুনি এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি নেতা প্রকাশ পাল অভিযোগ করেন—“ডানকুনি বাংলাদেশিতে ভর্তি হয়ে গেছে। তারা এসে এখানে পর্ন ভিডিও শুট করছে। তৃণমূল নেতারা ঘুমিয়ে আছে।”
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন— “আমাদের এলাকায় কোনো বাংলাদেশি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে রয়েছে, তা আমরা জানতাম না। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই—বাইরের লোক এসে কুকর্ম করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে।” তিনি আরও জানান, পুলিশের নিয়মিত তদারকি থাকলে এমন অপরাধমূলক কার্যক্রম আর কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
চার বছর ধরে চলা গোপন পর্ন ভিডিও চক্রের হদিস পেয়ে বাংলাদেশি যুবক রাসেল সিকদারের গ্রেপ্তার শুধুমাত্র একটি অপরাধীকে ধরার ঘটনা নয়—এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বেড়ে ওঠা বেআইনি নেটওয়ার্কের আরেকটি উদাহরণ। তদন্ত চলছে, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশা করছে, গ্রেপ্তারকৃত রাসেলের জবানবন্দি থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসবে।
Leave a comment