পবিত্র কোরআনের আলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ প্রজন্ম গঠনের লক্ষ্যে লালমনিরহাট জেলা শহরের মিশনমোড় এলাকায় অবস্থিত শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুল গ্রহণ করেছে একটি অনুপ্রেরণাদায়ী উদ্যোগ। রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কোরআন শিক্ষা আসরের তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হাতে কোরআন শরিফ বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীর হাতে পবিত্র কোরআন মাজিদ তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি হামদ, নাত ও গজল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝেও পুরস্কার প্রদান করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চায় নতুন উৎসাহ যোগায়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমান সমাজে নৈতিকতা, মানবিকতা ও সততার প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সে কারণে বিদ্যালয়ে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোরআন শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিক চরিত্র গঠন, মানবিক গুণাবলি বিকাশ এবং সঠিক জীবনদর্শন শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত দেন বক্তারা।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আমিনুর ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, “শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে ধর্মীয় শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ উদ্যোগ অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত।”
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হাফেজ মাওলানা গোলাম মোস্তফা তার বক্তব্যে বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে ‘সময়োপযোগী, প্রশংসনীয় ও সমাজ গঠনে কার্যকর’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “পবিত্র কোরআন শুধু পাঠের বিষয় নয়, এটি মানবতার পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। শৈশবে কোরআন শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের অন্তরে আল্লাহর নূর বিকশিত হয়। সমাজে ন্যায়, শান্তি ও মানবিকতার ভিত্তি স্থাপনে কোরআন শিক্ষার বিকল্প নেই।”
তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বিশেষ প্রেরণা পায় এবং অভিভাবকদের মধ্যেও ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দেখা যায়। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ জানান, বিশেষ আরবি শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অল্প বয়সেই শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে সক্ষম হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত চর্চা ও প্রশিক্ষণের ফলে শিক্ষার্থীদের হাতের লেখার সৌন্দর্যও বাড়ছে, যা বিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় চর্চা বৃদ্ধি পেলে তাদের সামগ্রিক আচরণ, শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যৎ জীবনবোধে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে শিক্ষার্থীদের উত্তম নৈতিক শিক্ষা, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং কোরআনের আলোয় পথচলার প্রত্যাশায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুন নবী। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিদ্যালয়ের আরবি শিক্ষক ওস্তাদ মো. আব্দুর রহিম।
শিবরাম আদর্শ পাবলিক স্কুলের এ উদ্যোগ কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়—এটি নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি নির্মাণের একটি প্রয়াস, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Leave a comment