আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস। প্রতিবছর ১৬ নভেম্বর বৈশ্বিক সমাজে সহনশীলতার চর্চা, ভিন্নতার প্রতি সম্মান এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার আহ্বান জানাতে দিনটি পালন করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি বিশ্বজুড়ে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে।
সহনশীলতার ধারণাকে বৈশ্বিকভাবে প্রতিষ্ঠার পথটি শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। ওই বছর ১৬ নভেম্বর ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো সর্বসম্মতভাবে ‘সহনশীলতা নীতির ঘোষণাপত্র’ গ্রহণ করে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়—বিশ্বের বৈচিত্র্যময় সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সহনশীলতা অপরিহার্য। সেই ঘোষণার পর ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৫১/৯৫ নম্বর প্রস্তাব পাস করে ১৬ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে।
ইউনেস্কোর মতে, মানবসভ্যতা প্রকৃতিগতভাবেই বৈচিত্র্যময়। বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মানবসভ্যতার অন্তর্নিহিত সম্পদ। এই বৈচিত্র্য যদি পারস্পরিক সহনশীলতা ও সম্মান দিয়ে রক্ষা করা যায়, তবে সংঘাত নয় বরং গঠনমূলক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পথ উন্মুক্ত হয়।
সহনশীলতা শুধু ভিন্নতার প্রতি স্বীকৃতি নয়—এটি সাম্য, ন্যায়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ভিত্তি তৈরি করে। সমাজে অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য, ঘৃণা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ কমাতে সহনশীলতার ভূমিকা তাই অপরিসীম।
বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে সম্প্রদায়ভিত্তিক বিরোধ, ধর্মীয় উগ্রতা, বৈষম্য ও সহিংসতার বৃদ্ধি বৈশ্বিক শান্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিপর্যায়ে সহনশীলতার অভাব মানবিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস মানুষকে নতুনভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়—সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পরিক সম্মান ও সহনশীলতা অপরিহার্য।
সহনশীল আচরণ কেবল সামাজিক সম্প্রীতিই নয়, ব্যক্তির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বৈচিত্র্যময় সমাজে সমান সুযোগ, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ভিন্নমতের প্রতি সম্মান রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করে।
সহনশীলতার নীতিমালা অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে আইন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক আচরণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সচেতন উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন্নতা গ্রহণের মানসিকতা গড়ে তোলা, বৈষম্য প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল বার্তা প্রচার এবং সমাজে শান্তির চর্চা বাড়ানো এ উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইউনেস্কো বলছে—সহনশীলতা শিখে নেওয়া যায়; এটি কোনো দুর্বলতা নয়, বরং মানবিক শক্তির পরিচয়। ব্যক্তিগত আচরণ, সামাজিক যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে সহনশীলতা বিকশিত হয়। আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস কেবল একটি প্রতীকী পালন নয়; বরং এটি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের প্রতি আহ্বান—অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা নয়, বরং সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং মানবিক মূল্যবোধই একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।
Leave a comment