ইউরোপের দেশ পর্তুগালে প্রস্তাবিত শ্রম আইন সংস্কারের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারের এই নতুন সংস্কার প্রস্তাব শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করবে এবং চাকরির নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলবে।
রোববার (৯ নভেম্বর) বিবিসি ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির রাজধানী লিসবনসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ডানপন্থি সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত শ্রম আইন সংশোধনীর আওতায় নিয়োগকর্তারা সহজে কর্মী ছাঁটাই করতে পারবেন। পাশাপাশি বাইরের কোম্পানিতে আউটসোর্স করার অনুমতি পাবেন এবং কিছু ছুটির সীমা কমানো হবে। এর মধ্যে বিশেষভাবে বিতর্কিত একটি প্রস্তাব হলো—গর্ভপাত বা গর্ভপাত-সংক্রান্ত কারণে নারীদের ছুটি কমানো।
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, এই পরিবর্তনগুলো কর্মক্ষেত্রে “নমনীয়তা ও উৎপাদনশীলতা” বাড়াবে এবং দেশটির শ্রমবাজারকে “আরও প্রতিযোগিতামূলক” করে তুলবে।
পর্তুগালের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠন সিজিটিপি (CGTP) এই প্রস্তাবকে “শ্রমিক শ্রেণির ইতিহাসে অন্যতম বড় আঘাত” বলে অভিহিত করেছে। সংগঠনের মহাসচিব তিয়াগো অলিভেইরা বলেন, “এই সংস্কার কার্যকর হলে এটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এক বিশাল পশ্চাদপদতা ডেকে আনবে। আমরা এই অন্যায় আইন মানি না।”
অলিভেইরা ঘোষণা দেন, আগামী ১১ ডিসেম্বর সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট পালন করা হবে। সিজিটিপির দাবি, রাজধানী লিসবনের প্রধান সড়কজুড়ে প্রায় এক লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, অন্তত দশ হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন, যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার, তাতে লেখা ছিল—“আমাদের অধিকার ফেরত দাও”, “চাকরির নিরাপত্তা সবার অধিকার”, এবং “শ্রমিকদের সম্মান করো”।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মিরিয়াম আলভেস বলেন, “এই সংস্কারগুলো স্পষ্টতই কর্মপরিবেশকে পিছিয়ে দেবে। শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা ধ্বংস হবে, বেতন ও সুবিধা কমে যাবে।” আর্কাইভ প্রযুক্তিবিদ মাদালেনা পেনা অভিযোগ করেন, “সরকার নির্বাচনের আগে এসব বিষয়ে কিছুই বলেনি। এখন গোপনে এমন এক আইন আনতে চাইছে, যা শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেবে।”
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পর্তুগালে গত বছর ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী মাসে এক হাজার ইউরোর কম আয় করেছেন। দেশটির বর্তমান ন্যূনতম মজুরি মাত্র ৮৭০ ইউরো, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম কম। এই প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীরা শুধু নতুন শ্রম আইন বাতিলের দাবিই নয়, বেতন বৃদ্ধি ও ন্যায্য মজুরি কাঠামোর দাবি তুলেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান ডানপন্থি সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার এজেন্ডা মূলত বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং শিল্পখাতে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি। তবে এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবনে। সরকারের এই প্রস্তাব সংসদে পাস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, কারণ শক্তিশালী ডানপন্থি দল শেগা (Chega) ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছে। এতে শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ড. কার্লোস মেন্ডেস বলেন, “পর্তুগালে শ্রমবাজার দীর্ঘদিন ধরেই অস্থির। সরকার যদি শ্রমিকদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এই আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
বর্তমানে পর্তুগালের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত। শ্রমিক সংগঠনগুলো পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে দেশজুড়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে। সরকার একদিকে সংস্কার বাস্তবায়নে অটল, অন্যদিকে শ্রমিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণ তা প্রতিরোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
Leave a comment