আমরণ অনশনরত বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অবশেষে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দিল সরকার।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপসচিব মরিয়ম মিতুর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সরকারের বর্তমান বাজেট কাঠামো ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন ভাতা কাঠামো ২০২৫ সালের নভেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট শর্ত কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। সেগুলো হলো—
১️. পরবর্তীতে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বাড়িভাড়া ভাতা সমন্বয় করতে হবে।
২️.ভাতা প্রদানে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতিমালা ২০২১’ (স্কুল ও কলেজ), ‘মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ এবং ‘ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও মৎস্য ডিপ্লোমা শিক্ষক-কর্মচারী নীতিমালা ২০১৮’-এর সকল শর্ত মেনে চলতে হবে।
৩️. ভাতা বৃদ্ধির ফলে কোনো প্রকার বকেয়া পাওনা দাবি করা যাবে না।
৪️.ভাতা প্রদানের সময় সকল আর্থিক বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।
৫️.ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে, বিল পরিশোধকারী কর্মকর্তা সরাসরি দায়ী থাকবেন।
সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর আন্দোলনরত শিক্ষকরা এটিকে ‘আংশিক সাফল্য’ হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও দীর্ঘদিনের দাবি পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়িত হয়নি।
বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের এক নেতা বলেন, “আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই, তবে ৫ শতাংশ ভাতা শিক্ষকদের জীবনযাত্রার বাস্তব ব্যয় মেটাতে যথেষ্ট নয়। সরকারকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করতে হবে।”
অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। বাজেটের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শিক্ষকদের জন্য বাড়তি সুবিধা অনুমোদন করা হয়েছে, যা ধীরে ধীরে আরও পরিমার্জিত হতে পারে।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের দাবি ছিল— বেতন কাঠামোয় বৈষম্য দূরীকরণ, চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া এবং উৎসব ভাতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকারি কর্মচারীদের সমপর্যায়ে উন্নীত করা।
শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন, যা শিক্ষা খাতের সংস্কার নিয়ে জনমনে আলোচনার জন্ম দেয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিতে সরকারের বার্ষিক ব্যয় কিছুটা বাড়বে, তবে তা শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা উচিত। শিক্ষকদের আর্থিক স্বস্তি শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ লাখের বেশি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের ভাতা বৃদ্ধি কার্যকর হলে বাজেটে কয়েকশ কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন হবে।
Leave a comment