গাজার নৌ অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ অবশেষে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আটকের পর নৌবহরের সব জাহাজ ও যাত্রীদের ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
ইসরায়েলের বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার গাজা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলার ৮টি জাহাজকে আটক করা হয়। এ সময় প্রায় ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। তারা সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং তাদের দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশি নাগরিক শহিদুল আলম ছিলেন ‘কনশানস’ নামের যাত্রীবাহী জাহাজে। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)-এর আয়োজিত এই বহরে মোট ৯টি জাহাজ ছিল। দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করা নৌবহরে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা অংশ নেন।
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বিশেষ ইউনিট শায়েতেত ১৩ এবং অন্যান্য বাহিনী বুধবার ভোরে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অভিযান চালিয়ে জাহাজগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয়। হেলিকপ্টার থেকে কমান্ডোরা রশি বেয়ে নেমে ‘কনশানস’ জাহাজে প্রবেশ করে বলে জানায় ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা সংগঠকরা অভিযোগ করেছেন, “আমাদের জাহাজে ইসরায়েলি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে এবং অন্য আটটি নৌযানও অবৈধভাবে ছিনতাই করা হয়েছে।” তাদের দাবি, অভিযানে অংশ নেওয়া অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নৌবহরটি গাজার হাসপাতালগুলোর জন্য ১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ওষুধ, রেসপিরেটরি সরঞ্জাম ও পুষ্টিসামগ্রী বহন করছিল বলে সংগঠনটি জানায়।
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যা একে ‘সমুদ্র ডাকাতির শামিল’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছে। তুরস্ক জানিয়েছে, আটক জাহাজে তাদের নাগরিক ও সংসদ সদস্যরাও ছিলেন।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে বলেন, “গত দুই বছরে হিটলারের চেয়েও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগগুলোকেও তারা আক্রমণ করছে।” এর আগে, গত সপ্তাহে গাজামুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-র ৪০টিরও বেশি নৌযান আটক করেছিল ইসরায়েল, যাতে ৪৫০ জনেরও বেশি মানবাধিকারকর্মী ছিলেন।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইসরায়েল, আলজাজিরা, রয়টার্স
Leave a comment