ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল ভবনের একাংশ ধসে পড়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থা (বাসারনাস) জানিয়েছে, রোববার (৫ অক্টোবর) ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নতুন করে আরও ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
দুর্ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে, যখন স্কুলটির শিক্ষার্থীরা জোহরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ ভবনের একটি বড় অংশ ধসে পড়ে মাটির নিচে চাপা পড়ে শতাধিক মানুষ।বাসারনাসের অভিযান বিষয়ক পরিচালক ইউধি ব্রামান্তিও রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন পর্যন্ত ১৪৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ জন মৃত এবং ১০৪ জন জীবিত। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
স্থানীয় উদ্ধার সংস্থার প্রধান নানাং সিগিত বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অন্তত ২৬ জন রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও ধ্বংসস্তূপের কিছু অংশে পৌঁছানো যাচ্ছে না।”
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা বুদি ইরাওয়ান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। উদ্ধারকাজে ৩০০-রও বেশি উদ্ধারকর্মী, সেনা ও পুলিশ সদস্য অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এখনও ভবনের ভেতরে আটকে থাকা মানুষের জীবিত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সব ভুক্তভোগীকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।”
বাসারনাসের পরিচালক ব্রামান্তিও জানান, মঙ্গলবারের মধ্যে অভিযান শেষ করার আশা করা হচ্ছে, তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও ধ্বংসস্তূপের অস্থিতিশীল অবস্থা উদ্ধার প্রচেষ্টাকে জটিল করছে।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির গৃহ ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও ত্রুটিপূর্ণ কাঠামোর কারণে ভবনটি ধসে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, স্কুল ভবনটি নির্মিত হয় ২০১৭ সালে, তবে গত কয়েক বছরে ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার কার্যক্রম যথাযথভাবে হয়নি।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আমরা প্রায়ই ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখতে পেতাম। কয়েক দিন আগেও একটি অংশে ধস দেখা দিয়েছিল, কিন্তু সেটি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আহমেদ ফিরদাউস সাংবাদিকদের বলেন, “এটি আমাদের জন্য এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। আমরা বহু মেধাবী ছাত্রকে হারিয়েছি। এখন কেবল মৃতদেহগুলোর অপেক্ষা।” ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে সরকার। এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে কঠোর তদন্ত হবে।”
ইন্দোনেশিয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর একটি। দেশটিতে প্রায়ই ভূমিকম্প, ভূমিধস ও দুর্বল অবকাঠামোজনিত ভবনধসের ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি হওয়ায় এসব দুর্ঘটনা বাড়ছে। স্থাপত্য প্রকৌশলী ড. স্যান্তো হাদির মতে, “নির্মাণ মান নিশ্চিত না করলে এই ধরনের দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়মিতভাবে ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই করতে হবে।”
Leave a comment