চকচকে ফেসবুক বিজ্ঞাপন, তাতে রাতারাতি শেয়ারবাজারে লাখো টাকার মুনাফার লোভনীয় প্রস্তাব—এভাবেই শুরু হচ্ছে বহুমুখী প্রতারণার জাল। বিজ্ঞাপন থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, সেখানে সাজানো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও ভুয়া সদস্যদের প্রশংসা। শেষ ধাপে ভুয়া ওয়েবসাইট বা অ্যাপে নিবন্ধন করিয়ে বিকাশ-নগদে টাকা পাঠাতে বলা হয়। সম্প্রতি ডিসমিসল্যাবের এক মাসব্যাপী অনুসন্ধানে এই প্রতারণার বিস্তৃত চিত্র উঠে এসেছে।
শুধু সেপ্টেম্বরেই অন্তত ১৫টি ফেসবুক পেজ থেকে শত শত বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। এসব বিজ্ঞাপনের টার্গেট করা হয়েছিল ২০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, যেখানে তিন হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত আছেন। ভুয়া গ্রুপগুলো নাম ব্যবহার করছে দুটি বৈধ ব্রোকারেজ হাউজ—সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড (সিবিএল) এবং ব্র্যাক ইপিএল সিকিউরিটিজ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিবিএল নাম ব্যবহার করে প্রতারণার জন্য বানানো হয়েছে একটি ভুয়া অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, আর ব্র্যাকের নামে চালানো হচ্ছে ভুয়া ওয়েবসাইট। সেখানে বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে সরাসরি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলা হয়, যা কোনো বৈধ ব্রোকারেজ চ্যানেলের মধ্য দিয়ে যায় না।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতো খ্যাতিমান ব্যক্তির ছবি এআই প্রযুক্তি দিয়ে সম্পাদনা করে এসব বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনগুলো প্রায় সবই যান্ত্রিকভাবে তৈরি, ভাষার গঠনও কৃত্রিম। একই অবস্থা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের বার্তাগুলোতেও—অটোমেটেড অনুবাদ, ছাঁচে বাঁধা উত্তর এবং সাজানো প্রশংসা ভরপুর।
এ প্রতারণায় ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের টেলিকম অপারেটরদের শত শত নম্বর এবং বিকাশ-নগদসহ এমএফএস প্ল্যাটফর্ম। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেন, ‘‘এখানে এমএফএস কোম্পানির নৈতিক দায় এড়ানো যাবে না। তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যা গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করবে।’’ বিকাশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধ লেনদেন ঠেকাতে নিয়মিত নজরদারি ও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি নিয়ে পুলিশ, সিআইডি ও বিএসইসিকে অবহিত করেছে। তবু ফেসবুকে নতুন বিজ্ঞাপন আসছে প্রতিদিন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও সক্রিয় রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার কৌশল দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। ফলে সচেতন না হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীর সর্বস্ব হারানোর ঝুঁকি বাড়ছেই।

Leave a comment