লাদাখকে রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় নেওয়ার দাবিতে লেহে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সহিংসতায় অন্তত ৪ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন; শহরে কারফিউ জারি ও বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
লেহ শহরে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক বৃহৎ বিক্ষোভ শুরুর পর তা সহিংসতায় রূপ নেয়। স্থানীয় সূত্র ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন; আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন দ্রুতই কারফিউ জারি করে এবং পাঁচজনের বেশি জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
অভিযানকারীরা স্থানীয় রাজনৈতিক দলের (বিজেপি) একটি অফিস এবং কিছু যানবাহনে আগুন লাগানোর পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপ করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ এবং সীমিত ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেছে — এটাই সংঘর্ষকে আরও তীব্র করেছে। ঘটনার পর প্রশাসন জরুরি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।
বিক্ষোভের মূল দাবিগুলো ছিল—(১) লাদাখকে পূর্ণ ‘রাজ্য’ মর্যাদা দেয়া, (২) সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় জনজাতিগত অধিকার ও ভূমি-সম্পদ রক্ষা করা, (৩) লেহ ও কারগিলের জন্য আলাদা লোকসভা আসন, এবং (৪) স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই দাবিগুলো নিয়ে কর্মকাণ্ড চলছিল।
এই বিক্ষোভ তীব্র হওয়ার সরাসরি প্রেক্ষাপট ছিল পরিবেশ কর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অনশন—যা কয়েক দিনের মধ্যে বেশ কয়েকজন অনশনকারীর অসুস্থ হয়ে পড়া এবং একটি উত্তেজনাপূর্ণ জনসামাগমের সূত্র ধরে আরও শক্তিশালী হয়। অনশনের সময় দুইজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তরুণেরা রাস্তায় নেমে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালে বলা হয়েছে, অনশন চলাকালে কিছু বক্তব্য জনসমক্ষে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে — যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সহিংসতা ছড়িয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের ওই অঞ্চলের বিশেষ অধিকারের ধারা (আর্টিকেল ৩৭০) তুলে নেওয়া ও জম্মু–কাশ্মীরকে পুনরায় বিন্যস্ত করার অংশ হিসেবে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আলাদা করা হয়। তখন অনেকেই সেটিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন; কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে ভূমিসংরক্ষণ, মিলিটাইজেশন, অবকাঠামো বিস্তারের সামাজিক-পরিবেশগত প্রভাব এবং স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের সীমাবদ্ধতাসহ প্রশ্নগুলো সামনে আসে। এসব দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের প্রতিফলন থেকেই এবার রাজ্য-স্বীকৃতি ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবি জোরালো হয়েছে।
স্থানীয় নেতৃত্ব, কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন এখন দ্রুত সংলাপের দাবি করছে। সংবাদসংস্থাগুলোর বরাতে জানা যাচ্ছে, উদ্বেগ প্রশমনে এবং পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উচ্চস্তরের আলোচনা ও তদন্ত শুরু হবে।
Leave a comment