প্রকৃতি মাঝে মাঝে এমন বিস্ময়কর দৃশ্য উপহার দেয়, যা দেখে মানুষ হতবাক হয়। তারই এক চমকপ্রদ উদাহরণ হলো অ্যান্টার্কটিকার ‘ব্লাড ফলস’ বা রক্তপ্রপাত। বরফে ঢাকা এই মহাদেশের বুকে সাদা বরফের মধ্যে দিয়ে লাল রঙের পানি গড়িয়ে পড়ে, যা দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন বরফ থেকে রক্ত ঝরছে।
রহস্যময় রক্তপ্রপাতের ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-
রক্তপ্রপাত প্রথমবারের মতো ১৯৩১ সালে একদল গবেষক দেখতে পান। এরপর থেকে বিজ্ঞানীরা এর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বহু বছর গবেষণার পর ২০১১ সালে জানা যায়, লাল রঙের পানি কোনো শ্যাওলার কারণে নয়। বরং রহস্য লুকিয়ে আছে বরফের নিচের মাটির গভীরে। রক্তপ্রপাতের পানি মূলত টমাস হিমবাহের নিচে থাকা একটি লবণাক্ত হ্রদ থেকে আসে। এতে প্রচুর লোহা রয়েছে। যখন এই লবণাক্ত ও লোহা যুক্ত পানি বরফের নিচ থেকে বের হয়ে বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন অক্সিজেনের সঙ্গে লোহার সংযোগ হয় এবং পানি লালচে বাদামি রঙ ধারণ করে—একধরনের ‘জং’ বা মরিচার মতো।
চরম পরিবেশে বেঁচে থাকা জীবাণু-
রক্তপ্রপাতের পানিতে এমন এক ধরনের জীবাণু পাওয়া গেছে যা চরম প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণ প্রাণীর মতো অক্সিজেন ব্যবহার না করেও তারা বেঁচে থাকে পানিতে থাকা সালফেট ব্যবহার করে। এই আবিষ্কার গবেষকদেরকে মঙ্গলের মতো গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে সহায়তা করছে।
প্রাকৃতিক গঠনের ইতিহাস-
বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ২০০,০০০ বছর আগে সমুদ্রের পানি অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে আটকা পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই পানিতে চারপাশের পাথর থেকে লবণ ও লোহার মতো খনিজ পদার্থ মিশে যায়। হিমবাহ গলে সেই লবণাক্ত লোহাযুক্ত পানি আজকের এই রক্তপ্রপাতের রূপ নেয়।
দর্শকদের অভিজ্ঞতা-
বিজ্ঞানীরা যত ব্যাখ্যা দিন না কেন, বরফের মধ্য দিয়ে লাল রঙের পানি পড়তে দেখে যে কারোরই ভয় লাগে। এটি প্রকৃতির এক ভয়ংকর কিন্তু অপূর্ব সৌন্দর্য। আজও প্রকৃতিপ্রেমী ও বিজ্ঞানীদের কাছে ব্লাড ফলস বিস্ময়ের উৎস হিসেবে রয়ে গেছে।
Leave a comment