দেশের একমাত্র সরকারি কাচ কারখানা উসমানিয়া গ্লাস শিট টানা লোকসানে জর্জরিত হয়ে দুই বছর ধরে বন্ধ। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত এ কারখানার সর্বশেষ উৎপাদন থেমে যায় ২০২৩ সালের আগস্টে দ্বিতীয় ফার্নেসের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর। এর আগেই প্রতিষ্ঠানটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লোকসান গুনে আসছিল।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, কিন্তু খরচ হয়েছে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ১ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও একই চিত্র—আয় ছিল ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, খরচ ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এক দশক ধরে এমন ঘাটতিতে থেকে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেনি। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার মুনাফা হয়েছিল।
অবস্থা এতটাই নাজুক যে বর্তমানে কারখানাটি কাঁচামাল ও পুরোনো যন্ত্রাংশ বিক্রি করে সামান্য আয় করছে। ব্যয়ের অর্ধেকই যাচ্ছে বেতন-ভাতায়। বর্তমানে ১০৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ঋণের টাকায়। গত বছরের জুন পর্যন্ত বিসিআইসির কাছে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে উসমানিয়ার দায় এখন ৬১ কোটি টাকারও বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার মূল কারণ পুরোনো প্রযুক্তি ও জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই দামে উন্নত মানের কাচ সরবরাহ করছে। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও উসমানিয়ার পণ্যের চাহিদা নেই।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, পুরোনো প্রযুক্তি দিয়ে উৎপাদনে ফেরানো সম্ভব হলেও বাজারে টেকসই হবে না উসমানিয়া। তাঁর মতে, দায়দেনা মিটিয়ে এই জায়গায় বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা অন্য কোনো শিল্প স্থাপন করা যেতে পারে।
এদিকে বিসিআইসিও নিজেই লোকসানে জর্জরিত। ২৮ বছরের মধ্যে ২৪ বছরই লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ অর্থবছরে তাদের লোকসান ছিল রেকর্ড ৯১৩ কোটি টাকা। ফলে উসমানিয়ার মতো ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
Leave a comment