ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলায় বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকায় অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৩ জন সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারান। একই দিনে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের কারণে মারা গেছেন আরও চারজন।
চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, উত্তর গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন আটজন । শহরের তুফফাহ এলাকায় আরেকটি হামলায় প্রাণ হারান দুজন। এই হামলাগুলো এমন সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের জন্য নতুন সামরিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, শত-সহস্র ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজার তথাকথিত ‘কনসেনট্রেশন জোন’-এ জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মহল এই পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ভেতর থেকেও এ নিয়ে আপত্তি এসেছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি আগ্রাসনে উত্তর গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন “জীবনহীন মরুভূমি”-তে পরিণত হয়েছে।
গাজা সিটির বাসিন্দাদের মধ্যে আবারও বাস্তুচ্যুত হওয়ার ভয় বাড়ছে।
ওয়ালা সুবহ নামের এক নারী জানান, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া থেকে গাজা সিটিতে পালিয়ে আসেন। এখন তার আর যাওয়ার জায়গা নেই। তিনি বলেন, “ যাওয়ার মতো কোনো স্থান নেই, কোনো আয়ও নেই। আমি একা, স্বামীহীন। যদি আমাদের সরিয়ে দিতে চায়, অন্তত আমাদের থাকার জায়গা দিক— তাঁবু হোক বা অন্য কিছু, বিশেষ করে বিধবা, শিশু ও অসুস্থদের জন্য। এখানে আপনি একজন বা দুজনকে নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষকে উচ্ছেদ করছেন, যাদের কোনো আশ্রয় নেই।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি গাজাকে এক গভীর মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকটের পাশাপাশি বারবার বাস্তুচ্যুতি সাধারণ মানুষের জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে – এর ফলে শুধু মানবিক বিপর্যয়ই নয়, আঞ্চলিক উত্তেজনাও নতুন মাত্রা পাবে।
Leave a comment