ভারতের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (আইআইটি) খড়গপুর ক্যাম্পাসে আবারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক ছাত্রের।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজেন্দ্র প্রসাদ (আরপি) হলের একটি কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় চতুর্থ বর্ষের এই ছাত্রের মরদেহ । চলতি বছর এই ক্যাম্পাসের চতুর্থ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা এটি।
ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুসারে, প্রয়াত এই ছাত্রের নাম ঋতম মণ্ডল (২১)। কলকাতার বাসিন্দা ঋতম আইআইটি খড়গপুরে যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগে (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন। গত বুধবারই গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরেছিল ঋতম। বৃহস্পতিবার থেকে আবার তাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। এছাড়া, তার কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়নি কোনও সুইসাইড নোট।
গত বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খাওয়ার পর নিজের ঘরে ফিরে যান তিনি। সহপাঠীরা কেউ তার আচরণেও কোনো অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেননি। সহপাঠীরা জানান, শুক্রবার সকালে তার দরজা দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় প্রথমে তারা ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না মেলায় ক্যাম্পাসের পুলিশ আউটপোস্ট এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের জানানো হয় বিষয়টি।
পরে দুপুর প্রায় ১২টা নাগাদ দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখা যায়, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন ঋতম। আইআইটির এক কর্মকর্তা জানান, তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আইআইটি ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে। এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে তদন্তকারীরা জানান।
এর আগে, চলতি বছর জানুয়ারিতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার কার হয় তৃতীয় বর্ষের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র শাওন মালিকের মরদেহও। এরপর ২০ এপ্রিল অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় সমুদ্র প্রকৌশল বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র অনিকেত ওয়াকারের। ৪ মে আবার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আসিফ কামার নিজের ঘরে মারা যান। পর পর এমন কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ছাত্রদের মানসিক চাপ ও সহায়তার অভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন । সেই প্রেক্ষিতে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ হোস্টেলে বিভিন্ন উদ্যোগ চালু করেছে।
যার মধ্যে রয়েছে হোস্টেলের প্রতিটি কক্ষের দরজায় কাউন্সেলিং ক্যালেন্ডার এবং QR(বারকোড) কোড সংযোজন , যাতে শিক্ষার্থীরা চাপ বা হতাশার মুখোমুখি হলে সহজেই স্ক্যান করে ক্যাম্পাসে থাকা কাউন্সেলরদের কাছ থেকে গোপনে সাহায্য নিতে পারে।
এছাড়া, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ‘ক্যাম্পাস মাদারস’ নামেও একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিষয়ে পরামর্শ ও সহানুভূতি দিয়ে সহায়তা করেন নারী শিক্ষক ও কর্মীদের একটি দল।
Leave a comment