সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে এক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৯৪০ জন নিহত হয়েছেন। দ্রুজ ও বেদুইন সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হওয়া এই সংঘাত পরে গড়ায় সিরীয় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে। পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে ইসরায়েল হামলা চালায় দামেস্কে এবং পরে সিরিয়া সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। শুক্রবার তুরস্কে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টম বারাক এক্স-এ এক পোস্টে সিরিয়া ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
১৩ জুলাই শুরু হওয়া সংঘাতে ১৬ জুলাই হস্তক্ষেপ করে সিরীয় বাহিনী। কিন্তু দ্রুজ যোদ্ধাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। পরে ১৬ জুলাই ‘দ্রুজদের রক্ষার’ কথা বলে দামেস্কে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলা চালানো হয় সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে। শুক্রবার দিনভর সুয়েইদায় হামলা চলে ইসরায়েলি বাহিনীর।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সংঘাতে নিহতের মধ্যে ৩২৬ জন দ্রুজ যোদ্ধা, ২৬২ জন দ্রুজ বেসামরিক ব্যক্তি, ৩১২ জন সিরীয় সেনা ও ২১ জন বেদুইন রয়েছেন। সিরিয়ার সরকারি হিসাব বলছে, আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।
শুক্রবার ইসরায়েল সীমিত পরিসরে সুয়েইদায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য সিরীয় সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেয়। পরে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আবারও সেখানে সেনা মোতায়েন করে সিরিয়া সরকার। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও হাজার হাজার বেদুইন যোদ্ধা সুয়েইদায় প্রবেশ করছে, ফলে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের সংঘাতে খাবার, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২৮ বছর বয়সী এক বাসিন্দা মুদার রয়টার্সকে বলেন, “চার দিন ধরে কোনো বিদ্যুৎ, খাবার বা ইন্টারনেট নেই। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়।”
সংঘাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘও। সংস্থার মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক বলেছেন, সুয়েইদায় নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। এতে জড়িত রয়েছে সরকারপন্থী সেনাদের পাশাপাশি দ্রুজ ও বেদুইন যোদ্ধারাও।
২০২৪ সালের শেষদিকে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের অভিযানে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর আহমেদ আল-শারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ এই সরকার ইসরায়েলের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে, যদিও ইসরায়েল তাঁকে ‘জিহাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করে চলেছে।
Leave a comment