যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ছুটি কাটাতে গিয়ে চার বছর বয়সী শিশুকন্যার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম দিয়েছেন, এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসক। শিশুকে হত্যার পর ঘটনাটিকে ‘ পানিতে ডুবে যাওয়া’ হিসেবে উপস্থাপন করার অভিযোগে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. নেহা গুপ্তা (৩৬)। তিনি পেশায় একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটির বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুন ভোররাত ৩:৪০ মিনিটে গুপ্তা ৯১১-এ ফোন করে জানান, তার মেয়ে আরিয়া তালাঠি স্থানীয় মায়ামির এল পোর্টাল এলাকায় একটি স্বল্পমেয়াদি ভাড়ার বাসার পুলে ডুবে গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার নির্দেশনা অনুযায়ী পেছনের উঠানে যায় এবং সেখানে পুলের পানিতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে পায়। তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর দেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে। পরে জ্যাকসন মেমোরিয়াল হাসপাতালের রাইডার ট্রমা সেন্টারে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন তাকে ।
প্রথমে ঘটনাটি দুর্ঘটনা হিসেবে ধরা হলেও, এক সপ্তাহব্যাপী তদন্ত এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর গোয়েন্দারা জানায়, এটি ছিল একটি ‘স্টেজড ড্রাউনিং’, অর্থাৎ পরিকল্পিতভাবে সাজানো পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা।
ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, শিশুটির ফুসফুস ও পেটে ছিল না কোনও পানির অস্তিত্ব—যা প্রমাণ করে পানিতে ডুবে মারা যায়নি সে। বরং তার মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন ও অন্যান্য শারীরিক আলামত স্পষ্টভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার ইঙ্গিত দেয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, শিশুটি মারা যাওয়ার পরই তাকে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।
তদন্তকারীরা আরও বলেন, বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে গুপ্তার বক্তব্যে । তিনি দাবি করেছিলেন, আরিয়া রাত ৯টায় রাতের খাবার খেয়েছিল, কিন্তু ময়নাতদন্তে শিশুটির পেট ছিল একেবারে খালি, যা সময়কাল নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে। এছাড়া তিনি জানান, রাত ১২:৩০-এ দুজনে একই বিছানায় ঘুমাতে যান এবং রাত ৩:২০-তে শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে দেখতে পান আরিয়া বিছানায় নেই। পরে পুলে ভাসতে দেখে তিনি ১০ মিনিট চেষ্টার পর ৯১১-এ ফোন করেন। তবে সাঁতার জানেন না বলে দাবি করলেও তদন্তকারীরা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বর্তমানে মামলাটি দেখছে মায়ামি-ডেইড কাউন্টি শেরিফ অফিস। ডা. নেহা গুপ্তার আইনজীবী রিচার্ড কুপার বলেন, “একজন শোকাহত মা, যার মেয়ে সদ্য মারা গেছে, তাকেই এখন কারাগারে থাকতে হচ্ছে—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আশা করি, সম্পূর্ণ তদন্ত শেষে উদঘাটিত হবে প্রকৃত সত্য।”
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলে ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে হত্যার অভিযোগ শুধু মর্মান্তিকই নয়, উত্থাপন করেছে নৈতিক ও মানবিক প্রশ্নও ।
Leave a comment