২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ঘটে যাওয়া ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান ও সে-পরবর্তী অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া মোট ৬২৬ জন ব্যক্তির তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তালিকাটিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ সদস্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিচারক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঐ সময়কার সংকটময় পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষা করাই ছিল মুখ্য বিবেচ্য। হঠাৎ করে উদ্ভূত সহিংসতা, হামলা, অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, লুটপাট ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে অবনতির দিকে গেলে অসংখ্য ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তাঁদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে সেনানিবাসে গিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এই প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাখ্যা, সেনানিবাসে আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাইয়ের সুযোগ সে মুহূর্তে সীমিত ছিল, তাই মানবিক বিবেচনায় তাঁদের জীবনরক্ষা প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়।
তালিকায় দেখা যায়, ওই সময় মোট ৬২৬ জন ব্যক্তি সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ২৪ জন রাজনৈতিক নেতা, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, ৫১ জন পরিবারসহ নারী ও শিশু এবং একজন এনএসআই সদস্য। পরে পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ ব্যক্তি এক–দুই দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আইএসপিআর জানায়, গত বছরের ১৮ আগস্ট সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি প্রাথমিক তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং বিষয়টি তৎকালীন সময়ে নিষ্পত্তি হয়। এরপরও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা কিছু মহল থেকে চলছে, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত—এমন অভিযোগ তুলে সংস্থাটি সবাইকে এই ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জনগণের পাশে থাকার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী সর্বদা পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি স্বচ্ছ করার পাশাপাশি, গুজব ও মিথ্যা প্রচার রোধে বাস্তব তথ্য উপস্থাপন করল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
Leave a comment