১৮২১ সালের ৫ মে, ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ও বিতর্কিত শাসক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সেন্ট হেলেনা দ্বীপে। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে ইউরোপের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী অধ্যায়ের, যা বিপ্লব, যুদ্ধ এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল।
১৭৬৯ সালের ১৫ আগস্ট ইতালির কর্সিকা দ্বীপে জন্মগ্রহণ করা নেপোলিয়ন অল্প বয়সেই ফরাসি সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করেন। ফরাসি বিপ্লবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি দ্রুত সেনানায়ক থেকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে উঠে আসেন। ১৭৯৯ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ফ্রান্সের ‘প্রথম কনসাল’ হন এবং ১৮০৪ সালে নিজেকে ‘ফ্রান্সের সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত করেন। তাঁর শাসনামলে ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নেপোলিয়নিক যুদ্ধের ছায়া। সামরিক কৌশলে অদ্বিতীয় ও প্রশাসনিক সংস্কারে অগ্রগামী এই নেতা পুরো ইউরোপকে এককভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
নেপোলিয়নের সবচেয়ে বড় কীর্তি ছিল তাঁর সংবিধান ও আইনি সংস্কার, যা ‘নেপোলিয়নিক কোড’ নামে পরিচিত এবং পরবর্তী বহু দেশের আইনি ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। তবে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের আগ্রাসী নীতি ও একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতা তাঁকে বহু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়। রাশিয়ায় অভিযানের ব্যর্থতা ও ‘ওয়াটারলু যুদ্ধ’-এ চূড়ান্ত পরাজয়ের ফলে তাঁর সাম্রাজ্যভবন ভেঙে পড়ে।
পরাজয়ের পর তাঁকে ব্রিটিশরা আটলান্টিক মহাসাগরের প্রত্যন্ত দ্বীপ সেন্ট হেলেনায় নির্বাসিত করে, যেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ৫১ বছর বয়সে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন, তিনি পেটের ক্যানসারে মারা যান, আবার কেউ দাবি করেন, ধীরে ধীরে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যু ঘটানো হয়।
নেপোলিয়ন ছিলেন একদিকে জ্ঞান–বিজ্ঞানে আগ্রহী সংস্কারক, আবার অন্যদিকে ভয়ানক যুদ্ধপ্রিয় স্বৈরাচারী। তাঁর জীবনচক্রে উঠে এসেছে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন, পতনের গতি এবং ইতিহাসে অমর হয়ে ওঠার গল্প। তাঁর মৃত্যু শুধু একজন সম্রাটের পরিসমাপ্তি নয়, বরং একটি সাম্রাজ্যবাদী অধ্যায়ের অবসান — যা ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রকেই বদলে দেয়।
নেপোলিয়নের জীবনের আলো–অন্ধকার মিশ্র ইতিহাস আজও রাজনীতি, রাষ্ট্রচিন্তা ও নেতৃত্বের পাঠে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
Leave a comment