কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুই রোহিঙ্গা নারীকে জন্মসনদ সরবরাহের ঘটনায় চিওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তে উঠে এসেছে, রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন করে ওই দুই নারী একটি জালিয়াতি চক্রের সহায়তায় জন্মসনদ তৈরি করেছিলেন এবং তা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন।
চেয়ারম্যান আবু তাহেরের বরখাস্তের বিষয়ে আজ শুক্রবার (২ মে) দুপুরে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন। তিনি জানান, ২৯ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউপি-১ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব তৌহিদ এলাহি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে চেয়ারম্যান আবু তাহেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই ওই আদেশ বাস্তবায়ন করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালের ১১ জুন। রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিয়েতনাম যাওয়ার সময় অভিবাসন পুলিশ দুই রোহিঙ্গা নারী—হুমায়রা ও শারমিন আক্তারকে আটক করে। তাঁরা ভুয়া জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহার করছিলেন। এ বিষয়ে ১৫ জুন কুমিল্লার ডিএসবির উপপরিদর্শক ইমাম হোসেন চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করেন। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, হুমায়রা ও শারমিন চিওড়া ইউনিয়নের ডিমাতলী গ্রামের এক ব্যক্তি কাজী খবির উদ্দিনের কন্যা পরিচয়ে চিওড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ সংগ্রহ করেছিলেন।
পরবর্তীতে ২৭ জুন থানা-পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে এবং তদন্তে ওই জন্মসনদ জালিয়াতির কাহিনি প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগপত্রে কাজী খবির উদ্দিনকে অভিযুক্ত করা হলেও, চেয়ারম্যান আবু তাহেরকে রাখা হয়েছে সাক্ষী হিসেবে। তবুও তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান আবু তাহের দাবি করেন, তিনি এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন। জন্মসনদ ইস্যু প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জেনারেলের পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে তিনি সঠিক তথ্য দিয়েছেন বলে জানান। তাঁর বক্তব্য, ‘যে ব্যক্তি মেয়ে সেজে জন্মসনদ তৈরি করেছে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আমি সাক্ষী হয়েছি। কিন্তু তারপরও আমাকে বরখাস্ত করাটা দুঃখজনক ও অন্যায় মনে করছি।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ার দুর্বলতা ও ইউনিয়ন পরিষদের নজরদারি ঘাটতির কারণেই রোহিঙ্গারা এত দূর যেতে পেরেছে। ঘটনাটি বড় একটি জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে ইউপি প্রশাসনের সম্পর্কের ইঙ্গিতও দিচ্ছে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এ সিদ্ধান্ত একটি বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে—সরকার এ ধরনের অনিয়মকে কোনোভাবেই বরদাশত করবে না এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
Leave a comment