বাংলাদেশের সমুদ্র গবেষণা ও দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে চীনের Second Institute of Oceanography-এর কারিগরি সহায়তায়।
নতুন এই স্টেশনটি বঙ্গোপসাগর থেকে রিয়েল-টাইম ডেটা সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে এবং মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের বিশ্লেষণ করতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশের পূর্বাভাস ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের NOAA, ভারতের IMD এবং JTWC-এর উপর নির্ভর করতে হয়, যেখানে তথ্য বিশ্লেষণে ২০-৩০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। নতুন স্টেশনটি চালু হলে বাংলাদেশ নিজস্ব ডেটার ভিত্তিতে ৪৮-৭২ ঘণ্টা আগেই সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারবে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, এবং স্রোতের গতি নির্ণয় করে মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, এবং জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণায় ব্যাপক অবদান রাখার লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটি ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার মধ্যে চীন ৬০ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে।
এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন। তাঁর মতে, “এই স্টেশন বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে এবং আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বনির্ভর করে তুলবে।”
ভবিষ্যতে এই গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক ডেটা হাবে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। AI ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির সাহায্যে আরও উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা তৈরি এবং উপকূলীয় জেলেদের জন্য SMS ভিত্তিক সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করা হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. উদ্দিন বলেন, “এই প্রকল্প দেশের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটি আমাদের সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
২০২৫ সালের মধ্যেই স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতার দিকে এক বিশাল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Leave a comment