পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেসে সশস্ত্র জঙ্গিদের হামলার পর মুক্তি পাওয়া যাত্রীরা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। “আমরা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গুলি বর্ষণের মধ্যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছি,” বলছিলেন যাত্রী ইশাক নূর, যিনি মঙ্গলবার কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী ট্রেনটিতে ছিলেন।
প্রায় ৪০০ যাত্রী বহনকারী এই ট্রেনটি বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করা হয়। হামলায় ট্রেনের চালকসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সেনা সূত্র জানায়, ১৫৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ২৭ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে, তবে এসব তথ্যের কোনো স্বাধীন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, শত শত সেনা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে, হেলিকপ্টার ও বিশেষ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। তবে বিএলএ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করলে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রেনটিতে কমপক্ষে ১০০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তবে কতজন এখনো জিম্মি রয়েছেন, তা নিশ্চিত নয়। ইতোমধ্যে উদ্ধার হওয়া কিছু যাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সেনা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, কিছু হামলাকারী ট্রেন ছেড়ে পালিয়েছে এবং তারা অজ্ঞাত সংখ্যক যাত্রীকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়েছে।
বুধবার কোয়েটা রেলস্টেশনে কাঠের কফিন বোঝাই ট্রেনের দৃশ্য দেখা গেছে। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এগুলো সম্ভাব্য নিহতদের দেহ সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়েছে।
যাত্রী মুহাম্মদ আশরাফ, যিনি কোয়েটা থেকে লাহোর যাচ্ছিলেন, তিনি জানান, “ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল, যেন কিয়ামত নেমে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের একটি দল চার ঘণ্টা হেঁটে কাছের স্টেশনে পৌঁছায়। অনেকে দুর্বল যাত্রীদের কাঁধে করে নিয়ে যান।
অন্য এক যাত্রী ইশাক নূর বলেন, হামলার শুরুতে বিস্ফোরণ এত প্রবল ছিল যে তাঁর সন্তান আসন থেকে পড়ে যায়। “আমরা নিজেদের দিয়ে সন্তানদের ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছি, যেন গুলি এলে আমাদের লাগে, ওদের না,” তিনি জানান।
আরেক যাত্রী মুশতাক মুহাম্মদ বলেন, হামলাকারীরা বেলুচি ভাষায় কথা বলছিল এবং তাদের নেতা বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নজরে রাখার নির্দেশ দিচ্ছিলেন।
বিএলএ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেলুচিস্তানের কিছু বাসিন্দা, নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের ছেড়ে দেয়। ইশাক নূর জানান, তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে এবং পরিবারের উপস্থিতি দেখিয়ে ছাড়া পান।
বেলুচিস্তানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে বহু মানুষ নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীকে অপহরণ, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যদিও তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তান সরকার ও পশ্চিমা দেশগুলো বিএলএ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
মানবাধিকার কমিশন অব পাকিস্তান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ট্রেন জিম্মি করার ঘটনায় “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে বাকি যাত্রীদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a comment