সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছে। প্রায় দুই দশক পর মামলার বিচারিক অধ্যায়ের অবসান ঘটলো।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি নেতা তারেক রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বাবরসহ সব আসামির খালাসের রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রাখেন। এর মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটে।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার সব আসামিকে খালাস দেন। এরপর চলতি বছরের ১৯ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই আপিল খারিজ করে দেয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও শেখ হাসিনা ছিলেন ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক নেতা-কর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। শুরুতে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে এবং ‘জজ মিয়া নাটক’ নামে পরিচিত বিতর্কিত তদন্ত পর্ব তৈরি হয়।
মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়।
• ২০০৮ সালে প্রথম অভিযোগপত্রে ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
• ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আরও ৩০ জনকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়।
• ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেয়—
◦ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড,
◦ তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন,
◦ আরও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।
আসামিরা সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দেন। হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে জানায়, তদন্ত সঠিক ও নিরপেক্ষ হয়নি, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
এই মামলার শুরু থেকে রায় ঘোষণার প্রতিটি ধাপ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগ এ হামলাকে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রাজনৈতিক সন্ত্রাস হিসেবে উল্লেখ করে আসছিল। অন্যদিকে বিএনপি অভিযোগ অস্বীকার করে এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছিল।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এখন মামলার বিচারিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলেও এর রাজনৈতিক প্রতিধ্বনি দীর্ঘদিন বহমান থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রায় দুই দশক ধরে চলা এই বহুল আলোচিত মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলো সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের মাধ্যমে। তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাস বহাল থাকায় মামলাটি ইতিহাসে এখন একটি সমাপ্ত অধ্যায় হয়ে রইলো।
Leave a comment