রাজশাহীর তানোর উপজেলায় পরিত্যক্ত একটি গভীর নলকূপের গর্তে আটকে পড়া দুই বছরের শিশু স্বাধীনকে দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা পরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা ঘিরে পুরো এলাকায় উদ্বেগ, আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের লক্ষ্যেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একাধিক ইউনিট রাতভর এবং পরদিন সকাল থেকে টানা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। কোয়েলহাট উত্তরপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা একটি গভীর নলকূপের সরু গর্তে হঠাৎ করে পড়ে যায় শিশু স্বাধীন। স্থানীয়রা প্রথমে গর্তের ভিতর থেকে তার কান্নার শব্দ শুনতে পায়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তানোর স্টেশন থেকে উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
প্রথম দিকে একটি স্কেভেটর দিয়ে খনন কাজ শুরু হলেও পরে উদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আরও দুটি স্কেভেটর আনা হয়। তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী সদর স্টেশনের মোট তিনটি ইউনিট রাতভর কাজ চালায়। অত্যন্ত সরু ও গভীর গর্ত হওয়ায় শিশু স্বাধীনকে বের করা সম্ভব না হওয়ায় বিকল্প হিসেবে পাশের মাটিতে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নেয় উদ্ধারকারী দল।
বুধবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় গর্তে ক্যামেরা নামিয়ে শিশুটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চালায় ফায়ার সার্ভিস। তবে ওপর থেকে পড়ে যাওয়া মাটি ও খড়ের স্তর ক্যামেরার দৃশ্যমানতা বাধাগ্রস্ত করে। ফলে শিশুটিকে সরাসরি দেখা সম্ভব হয়নি। দুপুর পর্যন্ত গর্তের ভেতর থেকে তার কান্নার শব্দ শোনা গেলেও রাত বাড়ার সাথে সাথে সেই শব্দও মিলিয়ে যায়, যা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোর থেকে নতুন করে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু করে উদ্ধারকারী দল। এ সময় প্রায় ৩০ ফুট গভীর পর্যন্ত খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। লক্ষ্য—গর্তের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ না করে পাশ দিয়ে যাতায়াতযোগ্য একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করে শিশুটির কাছে পৌঁছানো। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক দিদারুল ইসলাম বলেন, “উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। গর্ত কাটা শেষে সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে।”
উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা আশাবাদী হলেও শিশুটির অবস্থার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। উদ্ধার পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
Leave a comment