জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। পুরো এলাকায় তৈরি করা হয়েছে একাধিক নিরাপত্তা বলয়। ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের আগে সাংবাদিক ও সাধারণ দর্শনার্থীদের তল্লাশির মধ্য দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট জানায়, রায় ঘোষণার দিনকে ঘিরে কোনো ধরনের নাশকতা বা অস্থিতিশীলতা এড়াতেই এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল সংলগ্ন সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে এবং বিকল্প পথ ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে নাগরিকদের। বুধবার বিকেল থেকেই বিজিবি সদস্যদের ট্রাইব্যুনালের সামনে টহল দিতে দেখা গেছে। রাতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।
এদিকে, শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণের পর নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে ‘লকডাউন কর্মসূচি’, যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্বেগ বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ও অবরোধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে পুলিশ ও র্যাবের যৌথ দল গ্রেপ্তার করেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব ঘটনার কারণে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও সরকারি স্থাপনাগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।ট্রাইব্যুনাল ভবনের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি শুধুমাত্র আইনজীবী, সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে প্রবেশপথে পরিচয়পত্র যাচাই ও নিরাপত্তা স্ক্যানার পেরিয়ে ঢুকতে হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার সময় বা পরে কোনো অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন কোনো সন্দেহজনক যানবাহন বা ব্যক্তি নজর এড়িয়ে না যায়।
একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা গোয়েন্দা নজরদারি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রেখেছি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি। নাগরিকদের আতঙ্কিত না হয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
রায় ঘোষণার আগে থেকেই রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ট্রাইব্যুনাল এলাকাকে ‘উচ্চ-নিরাপত্তা অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে রায় ঘোষণা সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
Leave a comment