হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বারো চান্দুরা গ্রামের দিনমজুর ছাবু মিয়া হত্যা মামলায় ১৬ বছর পর রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এর বিচারক এ কে এম কামাল উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা বারো চান্দুরা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে এমরান মিয়া, মারাজ মিয়ার ছেলে সোলেমান, হরমুজ আলীর ছেলে জাহেদ মিয়া ও আবদুল মৌলার ছেলে আবুল হোসেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার বারো চান্দুরা গ্রামের ছাবু মিয়ার স্ত্রীর সঙ্গে একই গ্রামের এমরান মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ছাবু মিয়ার স্ত্রী রাশেদা বেগম ২০০৭ সালের জুন মাসে তিন সন্তান রেখে বাড়িছাড়া হন এবং এমরান মিয়াকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে ছাবু মিয়া ও এমরান মিয়ার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।
২০০৯ সালের ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে এমরান কয়েকজনকে নিয়ে ছাবু মিয়ার বাড়িতে যান। জরুরি কাজের কথা বলে ছাবুকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যান তাঁরা। ওই দিন রাতে ছাবু মিয়া আর বাড়িতে ফেরেননি। এক দিন পর ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল এলাকার সমমতপুর হাওরে ছাবু মিয়ার গলাকাটা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতপ্রাপ্ত খণ্ডিত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি ছাবু মিয়ার বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় ছাবু মিয়ার বড় ভাই হাফিজ মিয়া মাধবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছাবু মিয়ার সাবেক স্ত্রী রাশেদা বেগম, তাঁর স্বামী এমরান মিয়াসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের মে মাসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে হত্যাকাণ্ডের শিকার ছাবু মিয়ার সাবেক স্ত্রী রাশেদা বেগম, তাঁর ভাই সেলিম মিয়াসহ পাঁচজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলা চলমান অবস্থায় মারা যান এক আসামি।
এ হত্যাকাণ্ডের ১৬ বছর পর আজ হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এ ছাবু মিয়া হত্যার রায়ের দিন ধার্য ছিল। বেলা দুইটায় বিচারক এ কে এম কামাল উদ্দিন রায়ে উল্লেখিত চার আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের উপস্থিতিতে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে হবিগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শামছু মিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, এ রায়ের পরপরই আসামিদের পুলিশের বিশেষ পাহারায় হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Leave a comment