সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ‘স্ট্রোক’ বলে নাটক সাজিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্বামী। তবে শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতার করে।
রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার জোতগোলা গ্রামে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম আরব আলী (৩৬)। তিনি ওই গ্রামের দানেজ আলীর ছেলে। নিহত স্ত্রী আরজিনা (৩০) টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চেতুয়াজানি গ্রামের মৃত লাল মিয়ার মেয়ে।
চৌহালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বারিক জানান, প্রায় ১৩ বছর আগে আরব আলী ও আরজিনার বিয়ে হয়। সংসার জীবনের শুরুতে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকলেও, বছর দুই আগে আরব আলী একই এলাকার অন্য নারী ‘স্বপ্নার’ সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে স্বপ্নাকে বিয়ে করেন তিনি।
এই বিয়ের পর থেকেই প্রথম স্ত্রী আরজিনার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বাড়িতে প্রায়ই কলহ ও মারধরের ঘটনা ঘটত বলে স্থানীয়রা জানায়।
ওসি বারিক জানান, প্রায় তিন মাস আগে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে দ্বিতীয় স্ত্রী স্বপ্নাকে তালাক দেন আরব আলী। এই টাকা আসে প্রথম স্ত্রী আরজিনার পরিবারের কাছ থেকে। এরপরও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি চলতে থাকে।
“শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আরব আলী তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় যে আরজিনা ‘স্ট্রোক’ করেছে। এমনকি পরিবারের উপস্থিতিতে মাথায় পানি ঢেলে মৃত্যুর নাটক সাজানো হয়।
পরদিন রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। ঠিক সে সময় স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। সন্দেহজনক পরিস্থিতি ও শারীরিক চিহ্ন দেখে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে শ্বাসরোধে মৃত্যুর প্রমাণ মেলে বলে জানা গেছে।
ওসি আব্দুল বারিক বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে আরব আলী স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত চলছে, প্রয়োজনীয় প্রমাণ ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
ঘটনার পর নিহত আরজিনার চাচা বাদশা মিয়া বাদী হয়ে চৌহালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আরব আলীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত তিনজনকে সহআসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা শুনে হতবাক হয়েছি। গতকালই তো জানাজা হচ্ছিল, হঠাৎ পুলিশ এসে জানাল—এটা হত্যাকাণ্ড! যদি পুলিশ না আসত, হয়তো লাশ দাফন হয়ে যেত, সত্য চাপা পড়ে যেত।”
চৌহালী থানার ওসি জানান, অভিযুক্ত আরব আলীকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই আইনি প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সহযোগীদের শনাক্তে তদন্ত চলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশজুড়ে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক সচেতনতা, পারিবারিক কাউন্সেলিং এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানোর মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ সম্ভব।
Leave a comment