সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের মাররা পাহাড়ি এলাকায় ভয়াবহ ভূমিধসে এক হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভারী বর্ষণের পর গত শনিবার (৩১ আগস্ট) এই দুর্ঘটনা ঘটে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে একটি পুরো গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ওই গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দা মারা গেছেন, কেবল একজন বেঁচে আছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে চলছে শোক ও আতঙ্কের ছায়া।
সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট (এসএলএম) সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে। সংগঠনটির প্রধান জানান, মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে, তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হওয়ায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তারা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে জরুরি মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।
এসএলএম জানায়, সুদানের সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) চলমান দ্বন্দ্ব এড়াতে বহু মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে ওই দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে সেখানকার কঠিন পরিবেশ, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি ইতোমধ্যেই শরণার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল।
ভূমিধস সেই সীমিত আশ্রয়কেও শেষ করে দিল। এখন জীবিতদের উদ্ধারের চেয়ে মরদেহ উদ্ধারই প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রায় দুই বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে সুদানের অর্ধেকের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যুদ্ধ থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা এসব মানুষই এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হলেন। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় ১ কোটি মানুষ খাদ্যসংকটে রয়েছেন এবং লাখো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দারফুর ও আশপাশের অঞ্চলে গমন করেছেন।
মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয় সংগঠনগুলো বলছে, দুর্যোগকবলিত এলাকায় এখনই জরুরি ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম না নিলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
এই দুর্ঘটনা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের দুর্বলতারও প্রতিচ্ছবি। গৃহযুদ্ধের কারণে নিরাপদ আশ্রয় হারানো মানুষরা শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির ক্রোধের শিকার হয়েছেন।
মাররা পাহাড়ের ওই গ্রাম আজ নিশ্চিহ্ন—আর তা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, যুদ্ধ ও দুর্যোগ মিলিতভাবে কিভাবে একটি গোটা সম্প্রদায়কে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে পারে।
Leave a comment