Home আন্তর্জাতিক সুদানে এক সপ্তাহে অপুষ্টিতে ৬৩ জনের মৃত্যু
আন্তর্জাতিক

সুদানে এক সপ্তাহে অপুষ্টিতে ৬৩ জনের মৃত্যু

Share
Share

অবরুদ্ধ উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের নর্থ দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশেরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ৬৩ জন অপুষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। চলমান সংঘাত, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাস্তব প্রাণহানির সংখ্যা সরকারি হিসাবে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত রোববার (১০ আগস্ট) সাক্ষাৎকারে স্থানীয় এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, বাস্তবে বহু মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে মারা যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে স্থানীয়ভাবে দাফন সম্পন্ন করছেন, ফলে এসব মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হচ্ছে না।

এল-ফাশের শহরটিকে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে আধা-সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) অবরোধ করে রেখেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও RSF-এর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়, যা দ্রুতই গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়। এই সংঘাতের ফলে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জরুরি সহায়তার প্রবাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, চলমান যুদ্ধে সুদানে ইতিমধ্যে এক কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (IRC) বলেছে, এটি সুদানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো যুদ্ধরত দুই পক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। সেনাবাহিনী ও RSF উভয়ের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নিধন এবং নারীদের ওপর ব্যাপক যৌন সহিংসতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিশেষত RSF-এর বিরুদ্ধে দারফুর অঞ্চলে পরিকল্পিত গণহত্যা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো অপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা এল-ফাশের অবরোধ অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানো ছাড়া পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই অবরোধ শিথিলের পদক্ষেপ নেয়নি।

সহায়তা সংস্থাগুলোর মতে, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় প্রবেশের অনুমতি, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং লজিস্টিক সহায়তার অভাব মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। একাধিক সংস্থা বলেছে, অবরুদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া গেলেও ত্রাণ বহনকারী ট্রাকগুলোকে চেকপোস্টে আটকে রাখা হয় বা লুটপাটের শিকার হতে হয়।

স্থানীয় চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, পুষ্টিহীনতার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ও ডায়রিয়াজনিত রোগ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। টিকা কার্যক্রম ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সুদানের এল-ফাশেরে বর্তমান পরিস্থিতি শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট। অবরোধ, সংঘাত ও খাদ্য সংকটের ত্রিমুখী চাপে অসহায় বেসামরিক জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

সারজিস আলমের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা

গাজীপুরের বাসন থানার বিএনপি সভাপতি তানভীর সিরাজ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি সারজিস আলমের...

পুত্রাযায়ায় ড. ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহীমের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু

মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে একাধিক কূটনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে সন্ধ্যা...

Related Articles

ভারতের নাগরিক হওয়ার আগেই সত্যিই কি সোনিয়া ভোটার হয়েছিলেন

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ তুলেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। দলটির দাবি,...

দক্ষিণ ইউরোপের দাবানলে পুড়ছে গ্রিস

দক্ষিণ ইউরোপজুড়ে ভয়াবহ তাপপ্রবাহে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। গ্রিস, স্পেন, তুরস্ক...

মারা গেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বাসন্তী চ্যাটার্জি

ভারতীয় বাংলা টিভি সিরিয়াল ও সিনেমার জনপ্রিয় মুখ বাসন্তী চ্যাটার্জি আর নেই।...

ইসরায়েলে অস্ত্র পরিবহনের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করল সৌদি শিপিং কোম্পানি ‘বাহরি’

সৌদি আরবের জাতীয় শিপিং কোম্পানি ‘বাহরি’ ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র পরিবহনের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে...