সাংবাদিকদের প্রবেশপদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের মতো করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারণেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদসহ অন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনের মূল সুপারিশগুলো তুলে ধরেন কামাল আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের জন্য একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যা তাঁদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কমিশন এ বিষয়ে একটি আইনের খসড়াও তৈরি করেছে।
সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, বিসিএস ক্যাডারদের নবম গ্রেডের বেতন কাঠামোর সঙ্গে সংগতি রেখে সাংবাদিকদের বেতন নির্ধারণ করা যেতে পারে। ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য অতিরিক্ত ‘ঢাকা ভাতা’ যুক্ত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন শুরু হয় ২২ হাজার টাকা থেকে, যা অন্যান্য ভাতা যোগ করে ৩৫ হাজারের বেশি হয়।
সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তিনি বলেন, ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা উচিত। তবে, একজন সাংবাদিককে পূর্ণ মর্যাদা পেতে হলে এক বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হবে। একই নিয়ম সম্পাদক ও প্রকাশকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
গণমাধ্যম সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন আরও বেশ কিছু সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আইন প্রণয়ন।
কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশা করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে।’
গত বছরের ১৮ নভেম্বর সরকার গণমাধ্যম সংস্কারের লক্ষ্যে এ কমিশন গঠন করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল গণমাধ্যমকে আরও স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করে গড়ে তোলা।
কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান, সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমিরসহ আরও কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
গত নভেম্বর থেকে সরকার মোট পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। ৩১ মার্চের মধ্যে এসব কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। এর আগে সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
Leave a comment