জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে মতামত জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে দলগুলোকে ‘একমত’, ‘আংশিক একমত’ ও ‘ভিন্নমত’—এই তিনটি বিকল্পের মধ্যে মতামত দিতে বলা হয়েছে।
সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ, গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, গণপরিষদ, এবং নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার।
গত কয়েক দিনে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কারবিষয়ক একীভূত প্রতিবেদন সরবরাহ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশে একমত হবে, তার ভিত্তিতে ‘জুলাই চার্টার’ তৈরি করা হবে। সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রয়োজন না হলে, সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করবে। সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন হলে, গণভোটের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তাদের দাবি, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে এবং জরুরি সংস্কারগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল বলছে, সংস্কার তাড়াহুড়ো করে নয়, বরং টেকসই হতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে কিছু দল অভিযোগ করেছে যে, তারা সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পায়নি। কিছু দল বলছে, ২৫৪টি প্রস্তাবের প্রতিটির সঙ্গে তিনটি করে প্রশ্ন থাকায় পর্যালোচনার জন্য সময় প্রয়োজন।
বিএনপি জানিয়েছে, তারা দলীয়ভাবে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে, যারা সুপারিশ পর্যালোচনা করছে। বিএনপি ইতোমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব প্রকাশ করেছে এবং তা বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছে।
কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত বিশ্লেষণ করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কোনো দল যদি কোনো প্রস্তাবেও একমত না হয়, তাতেও সমস্যা নেই, তবে মতামত প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংবিধান পুনর্গঠনের জন্য গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এনসিপির নেতা সামান্তা শামরিন বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য নতুন সংবিধানের প্রয়োজন।
বিএনপির সংস্কার কমিটির সদস্যরা বলছেন, সুপারিশগুলোতে সমন্বয়হীনতা ও অস্পষ্টতা রয়েছে। জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, এত দ্রুত মতামত দেওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং সময়ের মধ্যে টেকসই সংস্কার করা উচিত।
ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন দল সংস্কার সুপারিশের মূল্যায়ন করছে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছে।
আগামী দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে ঐকমত্য কমিশন। পরে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে একটি চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার পরিকল্পনা ঠিক করা হবে।
Leave a comment