বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ বা লিখিত দলিল রাষ্ট্রপতির কাছে নেই। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজেই পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন যে তার হাতে এমন কোনো কাগজ নেই। সম্প্রতি কালের সংলাপ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, “যেদিন প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগ করেন, সেদিন রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তার পদত্যাগপত্র আমার কাছে আছে। কিন্তু পরে জানা যায়, এটা সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন, পদত্যাগপত্র দিলেন কখন, কাকে দিলেন? রাষ্ট্রপতি সেদিন দেশের প্রয়োজনে নিজের ঘাড়ে দায় নিয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন।”
তিনি আরও জানান, সাংবাদিক মতিউর রহমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতি তাকে বলেন, ‘আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।’ এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, “অনেকেই তখন দাবি জানালেন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের জন্য। কিন্তু আমরা বলেছিলাম, রাষ্ট্রপতি ঐকমত্যের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতু এই সরকার তার কাছে শপথ নিয়েছে, তাই তাকে সরাতে হলে সব দলের মতামতের ভিত্তিতেই হতে হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি রাষ্ট্রপতিকে একতরফাভাবে সরানো হয়, তাহলে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। সেই সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং দেশ আবারও অস্থিরতার দিকে যেতে পারে।”
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, “এরপর আমরা দেখলাম অনেক জায়গায় রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যতোক্ষণ পদে আছেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত তার ছবি সরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানে থাকা বাধ্যতামূলক। তাকে সরানোর পরই সেই পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল।”
তিনি মন্তব্য করেন, “রাষ্ট্রপতির পদটি একটি সাংবিধানিক পদ। তাই রাজনৈতিক চাপের কারণে এ পদে অস্থিরতা তৈরি হলে তা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য ক্ষতিকর।”
বিএনপি নেতার এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, হাবিবুর রহমানের বক্তব্য ‘বিভ্রান্তিকর’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তাদের মতে, দেশের প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগের ঘোষণা ও প্রক্রিয়া সংবিধানিকভাবে যাচাইযোগ্য।
অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতির নিজস্ব বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত হয়েছে যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ রাষ্ট্রপতির হাতে ছিল না, যা পুরো ঘটনাকে সন্দেহজনক করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ইস্যুটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং সাংবিধানিক স্বচ্ছতার প্রশ্নও জড়িত।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা এই ইস্যুটি সংসদে ও জনমত গঠনের মাধ্যমে আরও জোরালোভাবে তুলবেন। হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা চাই দেশে আইন, সংবিধান ও গণতন্ত্রের শাসন ফিরে আসুক। কোনো ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নয়, বরং জনগণের সিদ্ধান্তই হোক চূড়ান্ত।”
Leave a comment