যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে, কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার পাঁচ লাখেরও বেশি অভিবাসীর বৈধতা প্রত্যাহার করা হবে। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে এই অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং তাদের দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে ।
২০১৮ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসে, বিশেষত সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে। বাইডেন প্রশাসন সিএইচএনভি (Cuban-Haitian-Nicaraguan-Venezuelan) নামক একটি মানবিক কর্মসূচি চালু করে, যার মাধ্যমে কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পান। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল এসব দেশের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া মানুষদের বৈধ অভিবাসনের সুযোগ প্রদান করা।
তবে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর, সিএইচএনভি কর্মসূচিটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই কর্মসূচির আওতায় যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে, কতজন অভিবাসী নতুন বৈধ কর্মসূচির আওতায় আসতে পারবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে শুরু হওয়া সিএইচএনভি কর্মসূচির আওতায় প্রথমে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে, কিউবা, হাইতি, এবং নিকারাগুয়া থেকেও অনেক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তবে, এই কর্মসূচির জন্য কিছু শর্ত ছিল, যেমন অভিবাসীদের একজন মার্কিন পৃষ্ঠপোষক থাকতে হবে এবং তাদেরকে দুই বছরের জন্য প্যারোল (অস্থায়ী অভিবাসন মর্যাদা) দেওয়া হবে।
বাইডেন প্রশাসন সিএইচএনভির পক্ষে যুক্তি দিয়েছিল যে, এই কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে অবৈধ অভিবাসনের প্রবণতা কমাতে সহায়তা করবে। কিন্তু ২০২৪ সালে, ট্রাম্প প্রশাসন তার পূর্ববর্তী প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, এই কর্মসূচি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মতে, সিএইচএনভি কর্মসূচি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে অবৈধ অভিবাসনের প্রবণতা কমানোর বদলে তা আরও বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন এমন আরও এক বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয় নাগরিকদেরও অস্থায়ী বৈধতা বাতিল করা হতে পারে। প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তবে তাদের বৈধতা বাতিলের কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এ বিষয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ অভিবাসীদের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে এবং তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বৈধতার পথ আরও সংকীর্ণ করে তুলবে। এর ফলে, অনেকেই দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে, যা আগের প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিপরীত। তবে, বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে, কিছু সংখ্যক অভিবাসী হয়তো অন্যান্য বৈধ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে সক্ষম হবে, তবে তার জন্য কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কেবলমাত্র অভিবাসীদের উপরই পড়বে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, অভিবাসন নীতির পরিবর্তন সত্ত্বেও, এর কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে না যতদিন না অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতবিরোধ মেটানো যায়।
Leave a comment