যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় শিয়ালের কামড়ের তিন মাস পর প্রাণ হারালেন এক কিশোর। যথাসময়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) নিজ বাড়িতে সাগর হোসেন (১৫) নামে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়।
নিহত সাগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের গফফার হোসেনের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে সাগরকে একটি শিয়াল কামড়ে দেয়। কিন্তু সে বিষয়টি কাউকে জানাননি। কোনো চিকিৎসাও নেননি।
পরবর্তীতে গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের কাছে ঘটনাটি প্রকাশ করে। এরপর তাঁকে দ্রুত মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকেও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না হওয়ায় তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। অবশেষে বুধবার বিকেলে নিজ বাড়িতেই সাগরের মৃত্যু হয়।
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অনুপ কুমার বসু বলেন, “যে কোনো মানুষকে শিয়াল, কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্য কোনো বন্য প্রাণী কামড়ালে অবহেলা করা যাবে না। দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে হবে। বিশেষ করে রেবিস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নেওয়া অপরিহার্য।”
নিহতের বাবা গফফার হোসেন বলেন, “আমরা আগে জানতামই না যে সাগরকে শিয়াল কামড়েছিল। সে কিছু না বলায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ছেলেকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।”
রেবিস: প্রাণঘাতী সংক্রমণ-
বিশেষজ্ঞরা জানান, শিয়াল, কুকুর, বিড়ালসহ অনেক প্রাণীর কামড় রেবিস ভাইরাস বহন করতে পারে। এটি একবার সক্রিয় হলে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় শতভাগ। তবে সময়মতো চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন নিলে রেবিস প্রতিরোধযোগ্য।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বারবার সচেতন করছেন, তবে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এ বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা সমাজের জন্য বড় সতর্কবার্তা। প্রাণীর কামড়কে কখনো অবহেলা না করে অবিলম্বে টিকা নেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করাই একমাত্র নিরাপদ উপায়।
Leave a comment