মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অভিবাসন-বিরোধী অভিযানে ৭৭০ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। আটককৃতদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জনই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম নিউ স্ট্রেইট টাইমস।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। মাত্র দুই ঘণ্টার এ অভিযানে নাইটলাইফ ও বিনোদনকেন্দ্রের জন্য পরিচিত এলাকা কার্যত ‘লকডাউন জোনে’ পরিণত হয়।
“অপস বেলাঞ্জা” নামে পরিচিত এই অভিযানে অংশ নেন পুত্রজায়া থেকে আসা অভিবাসন বিভাগের ১০৬ কর্মকর্তা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভিযান শুরু হলে বুকিত বিনতাংয়ের তিন ব্লক চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়। প্রতিটি প্রবেশ ও প্রস্থানপথ অবরুদ্ধ করে নথি পরীক্ষা শুরু করা হয়।
তল্লাশির সময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শত শত অভিবাসী টেবিলের নিচে, দোকানের ভেতরে কিংবা ছাদে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন। অভিযানে মোট ২ হাজার ৪৪৫ জনকে তল্লাশি করা হয়, এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ জন বিদেশি এবং ৮৪৫ জন স্থানীয়।
অভিযান পরিচালনাকারী অভিবাসন বিভাগের পরিচালক বাসরি ওসমান জানান, আটক হওয়া ৭৭০ জনের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ৩৯৬ জন—যাদের মধ্যে ৩৯৪ জন পুরুষ ও ২ জন নারী।
এছাড়া আটক হয়েছেন—
• মিয়ানমারের ২৩৫ জন পুরুষ
• নেপালের ৭২ জন
• ভারতের ৫৮ জন
• ইন্দোনেশিয়ার ১৭ জন পুরুষ ও ২ জন নারী
• অন্যান্য দেশের আরও ৯ জন নাগরিক
অভিযানে একটি গোপন জুয়ার আসরও উন্মোচিত হয়, যেখানে সাত থেকে আটজন বিদেশি অনলাইনে জুয়া খেলছিলেন। তাদেরও আটক করা হয়েছে।
অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটক হওয়া অভিবাসীদের অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা, বৈধ পরিচয়পত্রের অভাব অথবা অনুমতি ছাড়া কাজ করার কারণে ধরা পড়েছেন।
বাসরি ওসমান বলেন, “বুকিত বিনতাং দীর্ঘদিন ধরেই অনিবন্ধিত অভিবাসীদের হটস্পট। নাইটলাইফ ও শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থানের কারণে এ এলাকায় তারা সহজেই আশ্রয় নেয়। আমরা তিন সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ চালানোর পর এ অভিযান পরিচালনা করি।”
মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত অবস্থায় থাকা অধিকাংশ বাংলাদেশি শ্রমিক দারিদ্র্য ও বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে নির্মাণ, বাগান কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করেন—যেসব খাতে স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তারা সহজেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আটকা পড়েন।
অভিযানে আটক হওয়া সবাইকে প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য প্রথমে পুত্রজায়ার অভিবাসন দপ্তরে নেওয়া হবে। এরপর তাদের আটককেন্দ্রে পাঠানো হবে।
বাসরি ওসমান বলেন, “এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে। আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও নজরদারি বাড়াব, যাতে মালিকরা অনুমোদিত কোটার বাইরে বিদেশি কর্মী নিয়োগ না দেন।”
মালয়েশিয়ার এই অভিযানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির আটক হওয়া নতুন করে প্রবাসী শ্রমিকদের দুরবস্থাকে সামনে নিয়ে এসেছে। বৈধতা সংকট, ভিসা জটিলতা এবং কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকরা প্রায়ই এমন অভিযানের শিকার হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের বৈধকরণের কার্যকর পদক্ষেপ ও দুই দেশের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
Leave a comment