বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে ভারত সরকারের অবস্থান নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)—সিপিআইএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম দাবি করেছেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নয়াদিল্লি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইঙ্গিত’ বা ‘সিগন্যাল’-এর অপেক্ষায় রয়েছে ভারত সরকার।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেলিম এ মন্তব্য করেন। তার বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের পাশাপাশি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক প্রভাবের প্রশ্নটিও সামনে নিয়ে আসে।
বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিআইএম নেতা বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন নাকি বাংলাদেশে ফিরবেন—এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদি সরকারের হাতেই রয়েছে। তার ভাষায়, “শেখ হাসিনা যাবেন কিংবা থাকবেন, সেটা মোদি সরকারই ঠিক করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বিষয়ে তারা এখনো কেন চুপ করে আছে?”
সেলিমের দাবি, অতীতে মোদি সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেও, সাম্প্রতিক সময়ে সেই অবস্থানে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আগে মোদি বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতেন। এখন আর বলছেন না। কারণ, ওয়াশিংটন বারণ করেছে।” তার মতে, এই নীরবতার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ও কূটনৈতিক প্রভাব কাজ করছে।
সিপিআইএম নেতার আরও অভিযোগ, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার প্রশ্নে ভারত সরকার নিজস্ব কূটনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়োগ না করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের দিকে তাকিয়ে আছে। “আসলে হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সিগন্যালের অপেক্ষা করছে,” বলেন সেলিম।
এই মন্তব্য ঘিরে ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে বামপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ সেলিমের বক্তব্যকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের প্রতিফলন হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে, শাসক দল বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার অবস্থান ও সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়; বরং এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক শক্তির সমীকরণের সঙ্গে যুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের টানাপোড়েনের মধ্যে এই ইস্যু নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
সব মিলিয়ে, মোহাম্মদ সেলিমের মন্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রভাব এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতাকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। ভারত সরকার এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কী অবস্থান নেয় এবং ভবিষ্যতে কোনো স্পষ্ট বার্তা দেয় কি না—সেদিকেই এখন রাজনৈতিক মহলের নজর।
Leave a comment