Home জাতীয় ভারতে মোগল শাসক আওরঙ্গজেবকে ঘিরে বিতর্কের উত্তাপ
জাতীয়

ভারতে মোগল শাসক আওরঙ্গজেবকে ঘিরে বিতর্কের উত্তাপ

Share
Share

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুর শহর এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সাক্ষী হয়েছে। মোগল শাসক আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়, এবং বহু মানুষ আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৭ মার্চ নাগপুরের মহল এলাকায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও আরও কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতারা আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এ সময় একদল বিক্ষোভকারী সবুজ কাপড়ে মোড়ানো আওরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে দেয়। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ওই সবুজ কাপড়ে পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা ছিল। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, এবং ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর বিক্ষোভ শুরু হয়।
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর নাগপুরের একাংশে কারফিউ জারি করা হয়। আইনজীবী আসিফ কুরেশির অভিযোগ, নিরীহ মুসলিমদেরও গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। এক মুসলিম বাসিন্দা আসলাম বলেন, ‘আমি কিছু করিনি। কিন্তু পুলিশ যখন আমার দরজায় আসবে, তখন তারা শুধুই আমার পরিচয় দেখবে।’
মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭) ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী শাসক ছিলেন। কিন্তু বিজেপি ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তাঁকে ধর্মান্ধ শাসক হিসেবে চিত্রিত করে। তাঁদের দাবি, আওরঙ্গজেব অসংখ্য মন্দির ধ্বংস করেছেন এবং হিন্দুদের উপর বৈষম্যমূলক কর আরোপ করেছেন।
তবে ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রুসকি বলেন, আওরঙ্গজেব শুধুই ধর্মীয় কারণে শাসন করেননি, বরং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার স্বার্থে অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁর শাসনামলে বহু হিন্দু নেতা মোগল প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, যা প্রমাণ করে যে তিনি কেবল ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো নির্বাচনের আগে আওরঙ্গজেবকে ইস্যু বানিয়ে ভোটের মেরুকরণ করতে চায়। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনাভিস বলেন, সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমা চাভা হিন্দুদের মধ্যে আওরঙ্গজেববিরোধী মনোভাব উসকে দিয়েছে।
আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে আন্দোলন আরও জোরালো হচ্ছে, এবং নাগপুরের সংঘর্ষ অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের ঘটনাগুলোকে হাতিয়ার করে বর্তমান রাজনীতি পরিচালিত হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও বিঘ্নিত হতে পারে।
নাগপুরের বাসিন্দা দত্ত শিরকে বলছিলেন, ‘এখন প্রতিবেশীর ওপরও ভরসা রাখা কঠিন হয়ে গেছে। কেউ জানে না, পরবর্তী হামলা কোথায় হবে।’
ইতিহাস কি শুধুই অতীতের অধ্যায়, নাকি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত এক শক্তিশালী অস্ত্র? ভারতে আওরঙ্গজেব বিতর্ক সেই প্রশ্নকেই সামনে নিয়ে এসেছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

হাসনাত আবদুল্লাহর স্ট্যাটাস ‘শিষ্টাচারবর্জিত’: নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ‘শিষ্টাচারবর্জিত’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। শনিবার বিকেলে...

আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না: আখতার হোসেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাঁদের রক্তের শপথ, আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে...

Related Articles

শ্রম ভবনের সামনে বেতনের দাবিতে আন্দোলন, অসুস্থ হয়ে একজনের মৃত্যু

শ্রম ভবনের সামনে বেতন-বোনাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনে অংশ নিতে এসে অসুস্থ হয়ে...

সিলেটের ‘ম্যাজিক ম্যান’ জাহাঙ্গীর আলম: অপরাধ, রাজনীতি ও ক্ষমতার খেলা

সিলেটে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে একজন ব্যক্তির নাম বারবার আলোচনায় আসে—জাহাঙ্গীর আলম।...

বাসসের এমডি মাহবুব মোর্শেদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব মোর্শেদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানহানির...

সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে হাসনাত ও সারজিসের ফেসবুক পোস্টে এনসিপিতে অস্বস্তি

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক...