ভারতের উত্তর গোয়ায় একটি জনপ্রিয় নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) মধ্যরাতের ওই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত ঘটনাটি নিশ্চিত করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায়, গোয়ার আরপোরা এলাকার ‘বার্চ বাই রোমিও লেন’ নামের ক্লাবে শনিবার রাতের দিকে আকস্মিক আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের সময় ক্লাবটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত তিন থেকে চারজন পর্যটকও নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
পুলিশ ও দমকল বাহিনীর প্রাথমিক ধারণা, ক্লাবের ভেতরে থাকা একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা পুরো ক্লাবে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে জীবন বাঁচাতে ছুটোছুটি শুরু হলে বেশির ভাগ মানুষ ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারান।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন,“আজ গোয়ার সবার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক দিন। আরপোরায় একটি বড় অগ্নিকাণ্ডে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।”
তিনি আরও জানান যে, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং দুর্ঘটনার পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নিহত ২৩ জনের মধ্যে তিনজন আগুনে পুড়ে মারা গেলেও বাকিরা ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকেই ক্লাবের ভেতরে আটকা পড়ায় দ্রুত বের হতে পারেননি।
গোয়ার পুলিশ মহাপরিচালক অলোক কুমার এএনআইকে বলেন,“নিহত সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।” তিনি আরও জানান, ঘটনার পেছনে কোনো নাশকতার ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও দায় নির্ধারণে ফরেনসিক দল কাজ করছে।
এএনআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন লাগার পরপরই দমকল বিভাগ তিনটি ইউনিট পাঠায়। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে ক্লাবের ভেতরে অত্যধিক কাঠের সাজসজ্জা থাকা এবং গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, ফলে প্রাণহানি বেশি হয়।
গোয়া ভারতের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোর একটি। বছরের এই সময়ে রাজ্যে পর্যটকের ভিড় থাকে। তাই একটি জনপ্রিয় নাইটক্লাবে এমন দুর্ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা, প্রশাসন ও পর্যটন বিভাগ সবাই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পর্যটন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান,“গোয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি পর্যটকদের আস্থা বজায় রাখতে এমন ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি।”
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা ও কর্মকর্তারা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন । স্থানীয় হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
Leave a comment