বিশ্ববাজারে আবারও কমে গেছে সোনার দাম। টানা চতুর্থ দিনের মতো মূল্যবান এই ধাতুর দরপতন বাজারজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কমে যাওয়াই এ পতনের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকেরা।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে বৈশ্বিক বাজারে স্পট গোল্ডের দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ১০ ডলারে নেমে আসে, যা আগের দিনের তুলনায় ০.৯ শতাংশ কম। একই সময়ে ডিসেম্বরে সরবরাহযোগ্য মার্কিন গোল্ড ফিউচার্সও ১.৬ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৯.২০ ডলারে লেনদেন হয়। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ১০০ ডলারের নিচে নামা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর অন্যতম বড় পতন।
মারেক্সের বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মেয়ার বলেন, “ডলার আজ তুলনামূলকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।” ডলার শক্তিশালী হলে স্বর্ণ অন্যান্য মুদ্রাধারীদের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। ফলে চাহিদা কমে যায় এবং বাজারে স্বর্ণের দাম নিচের দিকে ধাবিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘস্থায়ী সরকারি শাটডাউন অবসানের চুক্তি হওয়ায় বাজারে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শাটডাউনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বিলম্বিত হওয়ায় ফেডারেল রিজার্ভ ডিসেম্বরে সুদহার কমাবে—এই প্রত্যাশা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে গেছে।
ফেডের ভাইস চেয়ারম্যান ফিলিপ জেফারসন সোমবার বলেন, সুদহার কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে “ধীরে এবং সতর্কভাবে” এগোতে হবে। তার এই মন্তব্য বাজারে সুদের হার কমার সম্ভাবনা আরও দুর্বল করে দেয়। এএনজেড ব্যাংকের এক বিশ্লেষণ নোটে বলা হয়েছে, আগামী মাসে সুদহার কমানোর প্রত্যাশা রাতারাতি ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে সেপ্টেম্বরে সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর এই হার প্রায় ১০০ শতাংশ ছিল। প্রত্যাশা কমে যাওয়ায় স্বর্ণে বিনিয়োগের আগ্রহও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত সুদের হার কম থাকলে স্বর্ণ ভালো হয়। কম সুদে ডলারের বিকল্প নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু বর্তমানে সুদহার কমার জল্পনা দুর্বল হওয়ায় সোনার বাজারও চাপের মুখে পড়েছে।
তবে স্বল্পমেয়াদী এই পতনের পরও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সোনাবাজার শক্তিশালী হতে পারে বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে—
• বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা
• যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ
• ডি-ডলারাইজেশনের বৈশ্বিক ধারা
• বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ কেনা বৃদ্ধি
—এসব কারণ স্বর্ণের বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করবে।
সোনার পাশাপাশি অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দামও কমেছে।
• স্পট সিলভার: ১.২% কমে আউন্সপ্রতি ৪৯.৫৮ ডলার
• প্লাটিনাম: ১% কমে আউন্সপ্রতি ১,৫১৭.৭৩ ডলার
• প্যালাডিয়াম: ১.৫% কমে আউন্সপ্রতি ১,৩৭২.০৫ ডলার
এই সপ্তাহে বাজারের মূল নজর থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে—বিশেষ করে বৃহস্পতিবার প্রকাশিতব্য সেপ্টেম্বরের নন-ফার্ম পেরোল রিপোর্টে। এই তথ্য ফেডের পরবর্তী সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষায় আছেন—এই প্রতিবেদন সোনার বাজারে নতুন চাপ সৃষ্টি করবে, নাকি কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।
Leave a comment