বাউল সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাউলদের ওপর যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং সরকার এসব ঘটনার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশের পর মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ইতোমধ্যে দ্রুতগতিতে অভিযান শুরু করেছে। তিনি বলেন, “যারা এই বর্বর হামলায় জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জের পুলিশ প্রধান উপদেষ্টার নিদের্শনা অনুযায়ী কাজ করছে। পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও যেখানে যেখানে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই ফলাফল পাওয়া যাবে।”
ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শফিকুল আলম দাবি করেন, আগের সরকার—বিশেষত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে—রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব হারিয়েছিল। তার মতে, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার পরিবর্তে তখন রাজনৈতিক ইমেজ নির্মাণকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
তিনি মন্তব্য করেন, “শেখ হাসিনা মানবিক নেত্রী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি প্রচারে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। এতে রোহিঙ্গাদের বাস্তব সংকট আন্তর্জাতিক পরিসরে আর সেই গুরুত্ব পায়নি। যেখানে প্রয়োজন ছিল কূটনৈতিক উদ্যোগ বাড়ানোর, সেখানে ইমেজকে সামনে আনা হয়েছিল।”
এর বিপরীতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রত্যক্ষ বৈশ্বিক যোগাযোগের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটকে নতুন করে আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকার তালিকায় ফিরিয়ে এনেছে বলে দাবি করেন প্রেস সচিব।
দেশজুড়ে ভবন নিরাপত্তা, অবৈধ স্থাপনা ও তদারকি ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়েও সরকার উদ্বিগ্ন বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকায় যে পরিমাণ অননুমোদিত ভবন শনাক্ত হচ্ছে তা প্রমাণ করে অতীতের তদারকি কতটা দুর্বল ছিল।
প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন—অনুমোদন ছাড়া দেশের কোথাও কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তিনি আরও জানান, সব সিটি করপোরেশনে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া কঠোর করার পাশাপাশি নিয়ম-কানুন শক্তিশালী করতেই সরকার কাজ করছে। ভবন নির্মাণে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমন এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও সুসংহত করার পরিকল্পনা করেছে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বাউল সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব—এমন মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে প্রত্যেক নাগরিক ও সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন।”
ব্রিফিংয়ের শেষভাগে শফিকুল আলম জানান, বর্তমান সরকার মানবাধিকার, সামাজিক সম্প্রীতি এবং নাগরিক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো একটি মানবিক ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা যেখানে ভিন্নমত, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন।
Leave a comment