ভারতীয় চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনের আজ (১১ অক্টোবর) ৮৩তম জন্মদিন। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পর্দায় দাপট দেখানো এই অভিনেতা এখনও বলিউডের ‘সাদি কে মহানায়ক’ বা শতাব্দীর মহানায়ক হিসেবে সম্মানিত। তাঁর প্রতিটি উপস্থিতি এখনও দর্শকদের কাছে এক উৎসবের সমান।
অমিতাভ বচ্চনের পূর্ণ নাম অমিতাভ হরিবংশ রাই বচ্চন (জন্ম: শ্রীবাস্তব)। ১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদে (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন প্রখ্যাত হিন্দি কবি হরিবংশ রাই বচ্চন, আর মা তেজি বচ্চন ছিলেন থিয়েটার ও সমাজসেবায় যুক্ত।
চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৯ সালে, মৃণাল সেনের ‘ভুবন শোম’ ছবিতে কণ্ঠ বর্ণনাকারী হিসেবে। এরপর ১৯৭০ এর দশকের গোড়ায় ‘আনন্দ’, ‘জঞ্জির’, ‘রোটি কাপড়া অউর মকান’— এই ছবিগুলোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। তাঁর গম্ভীর কণ্ঠ, সংলাপ উচ্চারণ এবং দৃঢ় উপস্থিতি তাঁকে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করে, যা বলিউডে নতুন ধারার সূচনা ঘটায়।
৭০ ও ৮০ দশকে অমিতাভ বচ্চন পরপর উপহার দেন ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘ডন’, ‘কুলি’, ‘লাওয়ারিস’, ‘নমক হালাল’, ‘মর্দ’সহ অসংখ্য সুপারহিট চলচ্চিত্র। এই সময়েই ফরাসি পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো তাঁকে বলেছিলেন, “One-man industry।”
১৯৯০-এর দশকে কিছুটা বিরতির পর ২০০০ সালে ‘মহব্বতে’ ছবির মধ্য দিয়ে তিনি অভিনয়ে ফেরেন। এরপর ‘ব্ল্যাক’, ‘বাগবান’, ‘চেনি কুম’, ‘পিকু’, ‘পিঙ্ক’, ‘সরকার’, ‘বদলা’, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ও সর্বশেষ ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’ চলচ্চিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় তাঁকে নতুন প্রজন্মের কাছেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সংগীত, প্রযোজনা এবং টেলিভিশন উপস্থাপনায়ও সাফল্য দেখিয়েছেন। তাঁর সঞ্চালনায় জনপ্রিয় কুইজ শো কৌন বনেগা ক্রোড়পতি (KBC) ভারতীয় টেলিভিশনের ইতিহাসে বিশেষ জায়গা দখল করেছে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অমিতাভ বচ্চন অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন এবং ১৬টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া ৩৪ বার ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতা বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি পেয়েছেন ভারতের চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।
ভারত সরকার তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে পদ্মশ্রী (১৯৮৪), পদ্মভূষণ (২০০১) এবং পদ্মবিভূষণ (২০১৫) উপাধিতে ভূষিত করেছে। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাঁকে তাদের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অফিসার অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার প্রদান করে।
ভারত ছাড়াও অমিতাভ বচ্চনের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। ১৯৯৯ সালে বিবিসির এক জরিপে তাঁকে আখ্যায়িত করা হয় “মঞ্চ বা পর্দার সর্বশ্রেষ্ঠ তারকা” হিসেবে।
দীর্ঘ পথচলায় আজও তিনি সক্রিয়, উদ্যমী ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এক শিল্পী। ৮৩ বছর বয়সেও কাজের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ও শৃঙ্খলা বলিউডের নবীন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
Leave a comment