পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শুকানী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও বিজিবি। নিহত যুবকের নাম মানিক হোসেন (৩২)। তিনি দেবনগড় ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে সীমান্তের করতোয়া ও সাও নদীর মিলনস্থলে স্থানীয়রা মরদেহটি ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পরে বিজিবির সহায়তায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাজির হোসেন জানান, নিহত মানিকের মাথায় গুলির আঘাত রয়েছে। মাথার পেছন দিয়ে গুলি ঢুকে চোখের পাশ দিয়ে বেরিয়েছে। প্রাথমিকভাবে গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ভোরে কয়েকজন যুবক সীমান্ত পেরিয়ে গরু আনতে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন পালিয়ে গেলেও নিখোঁজ হন মানিকসহ চারজন। দুদিন পর শনিবার মানিকের মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
দেবনগড় ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আইবুল ইসলাম বলেন, “কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত। কিন্তু নির্বিচারে গুলি করে হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং আটক থাকা দুজনকে দ্রুত ফেরত দেওয়ার দাবি করছি।”
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ চারজনের মধ্যে একজন—আব্দুল হুদা ওরফে জমির উদ্দিনকে—শনিবার সকালে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিয়েছে বিএসএফ। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হবে বলে বিজিবি জানিয়েছে। তবে স্থানীয়রা দাবি করেছেন, এখনও আরও দুইজন বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। তাদের দ্রুত ফেরত চেয়েছেন স্বজনরা।
নীলফামারীর ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, “মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যাবে। আমরা সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বিএসএফের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি।”
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু পাচার রোধে বিজিবি ও বিএসএফের কড়াকড়ি থাকলেও প্রায়ই গুলি চালানোর ঘটনা ঘটছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর এমন ঘটনায় সীমান্তে একাধিক বাংলাদেশি প্রাণ হারাচ্ছেন। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
Leave a comment