নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব রবিবার কাঠমাণ্ডুতে ফিরলে হাজারো সমর্থক তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপাল ২০০৮ সালে গণপরিষদের সিদ্ধান্তে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। এর আগে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হলে শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়।
তবে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক মন্দা নেপালে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিকে জোরালো করছে।
সাবেক রাজা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশজুড়ে সফর করছিলেন এবং রবিবার পোখারা থেকে কাঠমাণ্ডু ফেরার সময় ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজারো সমর্থক তাকে পতাকা নেড়ে স্বাগত জানায়। তারা স্লোগান দেয়— “রাজা এসো, দেশ বাঁচাও।”
৪৩ বছর বয়সী এক শিক্ষক রাজিন্দ্র কুনওয়ার বলেন—
“দেশে অস্থিরতা চলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম চড়া, মানুষ বেকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা শোচনীয়। গরিবরা অনাহারে মরছে, কিন্তু আইন কেবল সাধারণ মানুষের জন্য, রাজনীতিবিদদের জন্য নয়। তাই আমাদের আবার রাজাকে দরকার।”
৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র শাহ সাধারণত রাজনীতিতে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। তবে সম্প্রতি তিনি সমর্থকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা দিচ্ছেন।
গত মাসে জাতীয় গণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন—
“এখনই সময়। যদি আমরা আমাদের দেশ রক্ষা করতে চাই এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে চাই, তাহলে নেপালের সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য আমাদের সমর্থন করুন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক লোক রাজ বরাল মনে করেন, “রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নেই। কারণ এটি একসময় অস্থিরতার উৎস ছিল।”
তিনি বলেন—
“রাজনীতিকদের ব্যর্থতা দেখে কিছু হতাশ জনগণ রাজতন্ত্রকে বিকল্প হিসেবে ভাবছে। এই ক্ষোভই এসব সমাবেশ ও বিক্ষোভের মূল কারণ।”
২০০১ সালে রাজপ্রাসাদ হত্যাকাণ্ডের পর জ্ঞানেন্দ্র শাহ রাজা হন, যখন তার বড় ভাই রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হন।
২০০৫ সালে সংবিধান স্থগিত ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করায় গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। মাওবাদীদের সঙ্গে মিলে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক বিক্ষোভ সংঘটিত করে।
২০০৮ সালে পার্লামেন্টের ভোটে নেপালের ২৪০ বছরের পুরনো হিন্দু রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়।
Leave a comment